সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘নগরবাসীর সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। তাতে আমার মেয়র থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমার চাচা মেয়র মানেই আমি মেয়র। একটি ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৫টিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। আমি মনে করি এটি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের জয়লাভ, জননেত্রী শেখ হাসিনার জয়লাভ এবং এটা খোকন সেরনিয়াবাতের জয়লাভ।
আজ শুক্রবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলে বরিশাল সিটির বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
এর আগে সদ্য সমাপ্ত বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্ছিত হন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। বরিশাল সিটিতে তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেয় দলের মনোনয়ন বোর্ড। এরপর থেকে খোকন সেরনিয়াবাতকে ঘিরে আওয়ামী লীগে কোণঠাসা একটি গ্রুপ সক্রিয় হতে শুরু করে।
এমনকি আওয়ামী লীগের মধ্যে শুরু হয় প্রকাশ্য গ্রুপিং। যা শেষ পর্যন্ত রক্তপাতে গড়ায়। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনকালীন সময় ঢাকায় অবস্থান করতে হয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে। সেই সুযোগে তাঁর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা দখলে নেয় সাদিক বিরোধীরা। এ নিয়ে অনেকটা উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল দলের নেতাকর্মীদের মাঝে।
সবশেষ দীর্ঘ ২ মাস ২১ দিন পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সাথে বরিশালে ফেরেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তার আগমনে প্রাণ ফিরে পায় অনুসারী নেতা-কমীর্রা। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন সাদিক আবদুল্লাহ।
সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এসময় মহানগর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন তাঁর সাথে।
পরে বরিশালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনো বিভক্তি হয় না, আওয়ামী লীগ সবসময় একতাবদ্ধ। যে কারণে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। আজকে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আমি শুভেচ্ছা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এবং দেশবাসীকে।
তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আমারা সংগঠনকে আরো গতিশীল করবো। সবাইকে একাতাবদ্ধ করবো।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কিন্তু অনেক প্রশ্ন আপনারা কিন্তু জানেন। তাদের (নগরবাসীর) সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। তাতে আমার মেয়র থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমার চাচা মেয়র মানেই আমি মেয়র। যার প্রতিফলন ভোটে প্রমাণিত হয়েছে। ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৫টিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। আমি মনে করি এটি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের জয়লাভ, জননেত্রী শেখ হাসিনার জয়লাভ এবং এটা খোকন সেরনিয়াবাতের জয়লাভ।’
মেয়র বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, এই শান্তির বরিশাল নগরী আমরা শান্তিতেই রাখার চেষ্টা করবো আমাদের সাধ্য অনুযায়ী।’
২৪ জুন একই দিন বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ এবং আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ঘিরে পাল্টাপালি কর্মসূচিতে কোন বিশৃঙ্খলার শঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আগেও বরিশালে এ ধরনের কর্মসূচি হয়েছে। বরিশাল শান্তির নগরী, আশাকারী শান্তি বজায় থাকবে।’
সম্প্রতি সময়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন স্থাপনা দখল প্রশঙ্গে মেয়র বলেন, ‘যারা সরকারি ইজারাদার, তারা টাকা জমা দিয়ে বৈধভাবে ইজারা নিয়েছে এবং এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। কেউ যদি গিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ফ্রি করে দেয়, যারা ইজারাদার তাঁরা দরখাস্ত যদি করে, অলরেডি আমাদের কাছে দরখাস্ত করেছে সেই দরখাস্ত অনুযায়ী আমরা আইনত ব্যবস্থা নেবো।
নগরীতে ইজারা প্রতিষ্ঠান জবর দখল কিসের লক্ষ্যন, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত পাঁচ বছর আপনারা দেখেছেন বরিশাল শাস্তির নগরী ছিলো। কিছু লোকজন তো আছে, থাকবে, সবসময় ছিলো, ভবিষ্যতেও থাকবে বর্তমানেও আছে। যারা সুবিধার জন্য আসে এই দলে, সুবিধা নেয়, সুবিধা নিয়ে চলে যায়। আজকে যদি এই দল ক্ষমতায় না থাকে এদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
পুষ্পস্তবক অর্পণকালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ- বীর বিক্রমসহ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।