এক ট্রান্সফরমারের জন্য তিনবার ভর্তুকি, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

ধামরাই প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১৬:৩৬

ট্রান্সফরমার। ছবি: ধামরাই প্রতিনিধি
ঢাকার ধামরাইয়ের বালিয়া গ্রামে একটি ট্রান্সফরমার জন্য গ্রাহকদের তিনবার ভর্তুকি গুণতে হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এনিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, কয়েক মাসের মধ্যে দুইবার চুরি ও আগে একবার জ্বলে যাওয়ায় এই ট্রান্সফরমার নতুন করে পেতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, গত ২২ জুন ভোর রাতে ট্রান্সফরমার চুরি হয়। সেটি আনতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ৮৫ জন গ্রাহক জনপ্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা করে দিয়ে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করান। এর আগেও ২০২২ সালে একবার ট্রান্সফরমার চুরি হয়। সেসময় এই ৮৫ জন গ্রাহককে জনপ্রতি বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে বাড়তি ১ হাজার ১০০ করে টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এছাড়া কয়েক বছর আগে ট্রান্সফরমার অকেজো হলে সেবার ৫০০ টাকা করে জনপ্রতি পরিশোধ করেছিলেন তারা।
তবে এ ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে প্রশাসনিক কোনো অভিযোগ করতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে অভিযোগ করতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা জানায় এটি তাদের বিষয়। তারাই তদন্ত করবেন। অথচ, ট্রান্সফরমার কেনা টাকা গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয়।
চুরির বিষয়ে অভিযুক্ত হিসেবে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের দিকেই তীর এলাকাবাসীর।
বালিয়া এলাকার বাসিন্দা ওমর খান বলেন, ফাঁকা জায়গা থেকে ট্রান্সফরমার সরানোর জন্য বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সরায়নি। এরমধ্যে কয়েক মাসের ভেতর দুইবার ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটলো। সবাইকে সেজন্য ভর্তুকি গুণতে হয়েছে। গরিব মানুষেরা ভর্তুকি দিতে পারছেন না। অথচ পল্লী বিদ্যুৎ এক টাকাও বাকি থাকলে ট্রান্সফরমার দেবে না বলে জানায়। এখন যে ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে, সেটির টাকা আমরাই পরিশোধ করি। তারপর নিজেরা গাড়ি ভাড়া করে এখানে আনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারাই তদন্ত করবেন। কিন্তু তাদের তদন্তের কোনো ফল দেখতে পেলাম না।
ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের কেউ জড়িত থাকতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একেকটি ট্রান্সফরমার ওজন প্রায় আট মণের কাছাকাছি। এই খুঁটিতে উঠে, ট্রান্সফরমার বহন করে নিচে নামানো একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের পক্ষেই সম্ভব। আর এই বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরাই চৌকস।
রাসেল খান নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ট্রান্সফরমার চুরি রোধে আমরা পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের বারবার এটিকে ফাঁকা জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা দেয়নি। এই ট্রান্সফরমার আনতে গিয়েও তাদের অসদাচরণের শিকার হতে হয়েছে। এনিয়ে তিনবার ভর্তুকি গুণতে হলো। এটাও কতদিন থাকবে জানি না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫০ গজের মধ্যেই বালিয়া খেলার মাঠের পাশে যাওয়া সড়কের পাড়ে একটি খুঁটিতে ট্রান্সফরমার রয়েছে। এখান থেকেই চুরির ঘটনা ঘটেছিল। সবশেষ এটির চুরি ঠেকাতে ট্রান্সফরমার শিকলে বেধে রাখা হয়েছে।
বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন, যদিও এলাকায় সেভাবে চুরির ঘটনা নেই। কিন্তু দেড় বছরের মধ্যে আরেকবার ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটলো। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখতে হবে।
ধামরাই থানার কাওয়ালীপাড়া বাজার তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইন্দ্রজিৎ কুমার বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এমন কোনো অভিযোগ ও তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এলাকাকে চুরিমুক্ত করতে চাই।
কুশুরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের ডিজিএম জসীম উদ্দিন বলেন, ট্রান্সফরমার চুরি হলে প্রথমবার গ্রাহকরা অর্ধেক ভর্তুকি দেবেন। আর পরেরবার পুরোটাই দিতে হবে। এটাই নিয়ম। তাই তাদের ওই অর্থ দিতে হয়েছে। এছাড়া কোনো অভিযোগ থেকে থাকলে তারা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।