Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

৪ বছরের ছুটিতে আমেরিকায় যাচ্ছেন সেই আলোচিত ইউএনও

Icon

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১৯:১৪

৪ বছরের ছুটিতে আমেরিকায় যাচ্ছেন সেই আলোচিত ইউএনও

আলোচিত ইউএনও নুসরাত ফাতিমা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা। যিনি যোগদানের পর মাত্র ১১ মাসেই নানা অঘটন আর বিতর্কের সৃষ্টি করে আলোচনায় উঠে আসেন। পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন বহুবার।

সেই আলোচিত ইউএনও নুসরাত ফতিমা যাচ্ছেন আমেরিকায়। এজন্য গত ২৮ জুন গভীর রাতে অনেকটা গোপনেই বাবুগঞ্জ ত্যাগ করেন তিনি। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য এ সপ্তাহেই তার আমেরিকা গমনের কথা রয়েছে। তার স্বামীও রয়েছেন সেখানে।

তবে হঠাৎ করেই চার বছরের শিক্ষা ছুটিতে দেশ ত্যাগের খবর শুধু বাবুগঞ্জ উপজেলাতেই নয়, গোটা দক্ষিণাঞ্চলজুড়েই আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি আর ফিরবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্নের দানা বেধেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

যদিও আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিকেলে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউএনও নুসরাত ফাতিমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আমেরিকায় যাবেন বলে স্বীকার করলেও কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি করেননি বলে দাবি করেছেন। তার দাবি বিধি মেনে কাজ করতে গিয়ে কিছু মানুষের বিরাগভাজন হওয়ায় তাকে নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ আগস্ট উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন নুসরাত ফাতিমা। যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার আর অনিয়ম-দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগ উঠতে শুরু করে।

যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সংস্কারের জন্য বরাদ্দের টাকায় ইউএনও বাংলোর বাথরুম সংস্কার ও আধুনিকায়নের ঘটনা। এছাড়া অভিযানে নিয়ে যাওয়া ট্রলার অভিযান শেষে পুড়িয়ে দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা এবং তার স্ত্রীকে প্রকাশ্যে থাপ্পড় মারার ঘটনা।

জানা গেছে, গত বছরের শেষদিকে উপজেলা পরিষদের এক সভায় প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি বিল উত্থাপন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল সংস্কার বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭১২ টাকা। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জনপ্রতিনিধিরা। অভিযোগ ওঠে ম্যুরাল সংস্কারের টাকা দিয়ে ইউএনওর বাসভবনের বাথরুম সংস্কারের।

উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, উত্থাপিত বিলে ম্যুরাল সংস্কার খাতে যে ব্যয় দেখানো হয়, তার কিছুই করা হয়নি। বরং ওই টাকা খরচ করা হয় ইউএনওর বাথরুম ও বাসভবন সংস্কারে। বাথটাব টাইলস উঠিয়ে লাগানো হয় নতুন করে। বাসভবনে থাকা পুরোনো টাইলস খুলে লাগানো হয় ম্যুরালে। বাসভবনে লাগানো হয় স্বর্ণালী রঙের নতুন টাইলস। আর ম্যুরাল সংস্কারে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকৌশল শাখার একটি দায়িত্বশীল সূত্র।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ওহাব বলেন, ইউএনও নুসরাত ফাতিমা যোগদানের মাত্র কিছুদিন আগে পূর্ববর্তী ইউএনও ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির সংস্কার করেন। এরপরও আবার কেন এর সংস্কার করতে হবে? পরিষদের কোনো পূর্বানুমোদন ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই টাকা খরচ করেন ইউএনও। আমরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে এই দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, অসংগতি পাওয়ায় ম্যুরাল সংস্কারের বিল আমরা পরিশোধ করিনি। যে কারণে বরাদ্দের টাকা ফেরত গেছে। যদিও ওই সময় এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন নুসরাত ফাতিমা।

এদিকে ২৪ জানুয়ারি বরিশাল প্রেসক্লাবে ইউএনও নুসরাত ফাতিমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন বাবুগঞ্জ উপজেলার আরজি কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম ওরফে ছত্তার। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিরোধিতার জেরে এক ইউপি সদস্যের কথা শুনে তার জমিতে ড্রেনের কাজ শুরু করান ইউএনও। প্রতিবাদ জানালে ব্যক্তিগত আনসার দিয়ে ছত্তার ও তার পরিবারকে হেনস্তা করেন।

এর আগে ওই ঘটনায় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধার বৃদ্ধ স্ত্রীকে মারতে তেড়ে যাচ্ছেন নুসরাত। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কেবল মারধরই নয়, বীর মুক্তিযোদ্ধার দুই ছেলেকে আটক করেন তিনি। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের অপপ্রয়োগও করা হয়। এই ঘটনার পর মামলা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছত্তার। মামলার প্রেক্ষিতে ড্রেন নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন আদালত। যদিও বীর মুক্তিযোদ্ধার এমন অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে দাবি ইউএনওর।

এর আগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর স্থানীয় মাঝি আনোয়ার হোসেনকে তার ট্রলারসহ ইলিশ রক্ষার অভিযানে নিয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা। অভিযান শেষে ফিরে এসে সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার সন্ধ্যা নদীর লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকায় ট্রলারটিতে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেন ইউএনও। তবে তৎকালীন সময় এই ঘটনাও অস্বীকার করেন তিনি।

সবশেষ গত তিনি ছুটিতে যাওয়ার আগে ২৫ জুন বাবুগঞ্জ উপজেলার সোনালী ব্যাংক খানপুরা শাখায় উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামকে ব্যাংকের কক্ষে আটকে রেখে সই আদায়ের চেষ্টা এবং গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়ে নতুন করে খবরের শিরোনাম হন নুসরাত ফাতিমা।

ওই সময় উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এডিপি প্রকল্পের প্রায় ২ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা। আমি এর প্রতিবাদ করলে ইউএনও আমাকে ব্যাংকের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ রেখে আনসার দিয়ে লাঞ্ছিত করান। এমনকি গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। এক পর্যায় চাপ সৃষ্টি করেই তারা আমার কাছ থেকে চেকে সই নিয়েছেন।

যদিও ঘটনার সময় সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী। গত মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদে উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তিনি জানান, সবকিছু না ভেবেই তিনি উত্তেজিত হয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। এসময় তিনি বলেন, ২০ কোটি টাকা নয়, বরং বিশেষ বরাদ্দে প্রায় ৫০ লাখ টাকা পেয়েছেন তারা।

এদিকে উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকে সই আদায়ের ঘটনাটি বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে। এমনকি প্রকৌশলীদের শীর্ষ সংগঠন এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে যখন সমালোচনার ঝড় বইছে ঠিক সেই মুহূর্তে গত ২৮ জুন ঈদের আগের রাতে বাবুগঞ্জ ত্যাগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উপজেলা প্রশাসনের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বেশ কয়েকদিন আগেই বাবুগঞ্জ ছাড়ার নির্দেশ পান ইউএনও নুসরাত ফাতিমা। এরপরও থেকে যান তিনি। এজন্য বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং-তদবিরও করেন। আসলে তিনি জুন পার করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার যাওয়াটা সুখকর হয়নি। ইউএনও হিসাবে কোনো রকম বিদায় সংবর্ধনাও পাননি তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫