বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৯:০৪

সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাবলে অবৈধভাবে বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের সভাপতির দায়িত্ব পালন এবং ক্লাবের সম্পদ বিনষ্টের অভিযোগ এনে বরিশালের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
একই ক্লাবের সদস্য (নং-৪৬২) বরিশাল নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকার আমতলা চৌধুরী কটেজের বাসিন্দা মফিজুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বরিশাল সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক ও সিনিয়র সহকারী জজ হাসিবুল হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে আদেশের জন্য অপেক্ষমান রেখেছেন। মামলার প্রধান বিবাদী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। তার পরিবর্তে তারই আপন চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের সাদিক বিরোধী শিবির সক্রিয় হতে শুরু করে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মামলায় দুজনকে বিবাদী করা হলেও শুধুমাত্র ১ নম্বর বিবাদী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অপর বিবাদী হলেন- ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের গঠনতন্ত্রের আর্টিকেল- ৩২ এর ক-ঘ ধরায় উল্লেখ রয়েছে, প্রতি দুই বছর অন্তর বার্ষিক সাধারণ সভায় স্থায়ী এবং আজীবন সদস্যদের ভোটে সভাপতি/চেয়ারম্যান এবং ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হবে।
সভাপতি/চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে হলে অন্তত ১০ বছর সদস্য এবং পরিচালক পদে নির্বাচন করার জন্য ন্যূনতম পাঁচ বছর সদস্য থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন ভোটের ফলাফল নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে বা ঘোষণা দিলে পর্ষদ নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হবে।
গঠনতন্ত্রে এমনটি থাকলেও বর্তমান সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
মামলায় বিবাদী উল্লেখ করেছেন, ১ নম্বর বিবাদী অর্থাৎ সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের সদস্য হন। তার সদস্য নম্বর ৬৭৬। সে হিসেবে গঠনতন্ত্রের আর্টিকেল ৩২(খ) ধারার বিধান অনুযায়ী সাদিক আবদুল্লাহর আগামী ২০২৬ সালের ১৯ আগস্টের আগে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
কিন্তু তিনি গঠনতন্ত্রের ধারা লঙ্ঘন করে ২০১৯ সালের ৮ মার্চ বেআইনি এবং অবৈধভাবে সভাপতির পদ দখল করেন। অথচ তিনি সভাপতি পদে নির্বাচন করার অযোগ্য ছিলেন।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ১ নম্বর বিবাদী বেআইনিভাবে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের ২টি রুমে থাকার ব্যবস্থা করেন। তিনি ধীর্ঘদিন যাবত রুম ভাড়া এবং ক্যাফেটারিয়ার বিল পরিশোধ না করায় কোটি কোটি টাকা ক্লাবের পাওনা রয়েছে। যার দায়ভার বাদীসহ ক্লাবের সদস্যদের বহন করতে হচ্ছে।
এছাড়াও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ক্লাবের স্বার্থ পরিপন্থী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন উল্লেখ করে বাদী মামলায় দাবি করেছেন, ১ নম্বর বিবাদীকে বেআইনি ও অবৈধ কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য এবং পদ ছেড়ে দিতে বহুবার অনুরোধ করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও গত ৭ জুলাই তিনি পদ ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আর তাই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।
এদিকে মামলার বিষয়টি নিয়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে ইতিপূর্বে বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে বরিশাল ক্লাবের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সকল অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। এমনকি বিষয়টিকে ক্লাব এবং সভাপতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও উল্লেখ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।