Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, পানিবন্দী ১৫ হাজার পরিবার

Icon

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৬:৩২

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, পানিবন্দী ১৫ হাজার পরিবার

তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্ট। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তার বাম তীরে নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ও চরাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানির চাপে ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে  পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি কিছুটা কমে একই পয়েন্টে সকাল ৯টা থেকে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় একই পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে। মূলত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে।


পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে শুধু তিস্তার বাম তীরে পাটগ্রামের আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকার ১৫ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজতলাসহ অনেক ফসলি জমি তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে গেছে।

এছাড়া ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধরলা নদী শিমুবাড়িয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা।

পানিতে ডুবেছে চরাঞ্চলের বাড়িঘর ও রাস্তা ঘাট। চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে।

এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পুরো জেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত, রাস্তাঘাট ও পুকুর। পশুপাখি নিয়ে বন্যার্তরা উঁচু স্থানে অবস্থান নিচ্ছে। অনেকেই উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সারছেন।

নলকূপ, টয়লেট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়ছেন বানভাসি মানুষ। ঘরের ভেতর হাঁটু পানি। অনেকে খাটের উপর চুলা তুলে রান্নার  কাজ সারছেন।

তিস্তা ব্যারেজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত থেকে তিস্তার পানি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার ও শনিবার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পাউবো সূত্র জানায়, পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে তিস্তাপাড়ের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আরো কী পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না।


পানিবন্দী পরিবার অভিযোগ করেন, তারা দুই দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাদের মাঝে শুকনো খাবার বা কোনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। কেউ তাদের খোঁজ পর্যন্ত করেনি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দুই দিন তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকতে পারে বলেও তিনি জানান।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ রাখছি। জেলায় দুর্যোগকালীন ৪৫০ মেট্টিক টন চাল ও সাত লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং পিআইওর মাধ্যমে ১১০ মেট্টিক টন চাল বিতরণ চলছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫