Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পরিবেশের হালনাগাদ তথ্য নেই বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরে

Icon

খান রুবেল, বরিশাল

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৬:৫৩

পরিবেশের হালনাগাদ তথ্য নেই বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরে

বরিশাল জেলার মানচিত্র

নানা কারণে পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে বিভাগীয় শহর বরিশাল। তবে এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই পরিবেশ দপ্তরের। এমনকি বর্তমানে বরিশালে বায়ু, পরিবেশ এবং শব্দ দূষণের মাত্রা কতো তাও জানেন না দপ্তরটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ নিয়ে সবশেষ কবে জরিপ হয়েছে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ হয়ে আছে শুধুমাত্র ইটভাটার অনুমোদন, পরিবেশের ছাড়পত্র প্রদান আর গণশুনানীতে। এর ফলে পরিবেশগত হালনাগাদ তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরিশালের মানুষ।

যদিও এর পেছনে জনবল সংকটের দোহাই দিচ্ছেন পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় জনস্বার্থের কাজগুলো করতে পারছেন না তারা। তবে জনবল সংকটের খোড়া অজুহাত দিয়ে পরিবেশ দপ্তরের কর্মকর্তাদের জনগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তরাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এতে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সহজ হয়েছে তেমনি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

পদ্মাসেতুর বদৌলতে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিন চলাচল করছে অসংখ্য যাত্রী এবং পণ্যবাহী যানবাহন। যানবাহনের নির্গত ধোয়া এবং ধুলা-বালুতে দূষিত হচ্ছে বরিশালের বাসাত। বাড়ছে শব্দ দূষণের মাত্রাও। তবে বাড়েনি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মক্ষমতা।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের প্রতিটি জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি করে কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় শহর বরিশালে রয়েছে দপ্তরটির বিভাগীয় কার্যালয়। স্ব স্ব জেলায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মূল দায়িত্বই এই দপ্তরের ওপর। তবে তুলনামূলক সেই কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না দপ্তর সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র জানায়, মূলত অবৈধ ইটভাটা, করাত কলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, কোন হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশের ছাড়পত্র প্রদান, পরিবেশের মান নির্ণয় ও ব্যবস্থা গ্রহণ, নদীর পানি মান নির্ণয়, শব্দ দূষণ, বায়ু বা বাতাস দূষণ এবং পরিবেশ দূষণের মাত্রা পরিমাপ, শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষণ জরিপ, ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্টের পরিবেশ পরিস্থিতি নির্ণয় করা, বায়ু, পরিবেশ এবং শব্দ দূষণের অভিযোগ গ্রহণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

তবে এর মধ্যে ইটভাটা, পরিবেশের ছাড়পত্র আর বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষণ জরিপ ছাড়া অন্য কোন কার্যক্রম নেই বরিশাল পরিবেশ দপ্তরের। অভিযোগ রয়েছে, যেসব কার্যক্রমে অবৈধ লেনদেনের সুযোগ রয়েছে সেই কার্যক্রমের দিকেই বরিশাল পরিবেশ দপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি বেশি। এমনকি অবৈধ কর্মকাণ্ডের বৈধতাও অর্থের বিনিময়ে দিয়ে থাকেন তারা। যার বাস্তবতা বিভাগজুড়ে অবৈধভাবে চলে আসা চার শতাধিক অবৈধ ইটভাটা ও করাত কলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালে বায়ু দূষণের সহনীয় মাত্রা ২০০ পিপিএম। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ৪৬৬ পার্স পার মিলিয়ন (পিপিএম)। পরবর্তী ছয় মাসের মাথায় সেই মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৭৮ পিপিএম-এ।

অপরদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বরিশাল নগরীতে শব্দ দূষণের মানমাত্রার চেয়ে ২৫-৩০ ডেসিবেল বেশি শব্দ সৃষ্টি হয়। ওইসময় নগরীর আমতলার মোড়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং নথুল্লাবাদ ও কাশিপুর এলাকায় হাইড্রোলিক হর্নের শব্দ ১১০ ডেসিবেলে পৌঁছায়।

এদিকে বায়ু এবং পরিবেশ দূষণের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে যোগাযোগ করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে। কিন্তু সেখান থেকে এ সংক্রান্ত হালনাগাদ কোন তথ্য জানাতে পারেননি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন বা দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এমনকি সবশেষ কবে এ বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষণ করেছেন সেই তথ্যও নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি তারা। তাছাড়া পরিবেশ সংক্রান্ত কোন তথ্যও জনগণকে জানতে দিচ্ছে না দপ্তরটি।

এর কারণ জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের পরীক্ষার ল্যাব আছে। তবে জনবল সংকট প্রচুর। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারছি না। তাছাড়া আমাদের কার্যক্রম জনগণকে জানাতে হবে এমন কোন নির্দেশনা আমাদের নেই। কেউ জানতে চাইলে তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে সুনির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে তথ্য জানতে পারবে।

তিনি বলেন, এসমস্ত কার্যক্রমের জন্য অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আমাদের এই দপ্তরে ৫টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে আমি এবং একজন নমুনা সংগ্রহকারী রয়েছে। বাকি তিনটি পদই শূন্য। তাছাড়া প্রশাসনিক শাখায়ও জনবল সংকট। তাই নমুনা সংগ্রহকারী যিনি আছেন তিনি প্রশাসনিক শাখায় কাজ করছেন।

এই কর্মকর্তা বলেন, বায়ু দূষণ এবং শব্দ দূষণের মান নির্ণয় করা আমাদের দায়িত্ব। তবে এর বাইরেও পরিবেশ দূষণের মান নির্ণয়ের জন্য নগরীর নতুন বাজার সংলগ্নে একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যেটি সরাসরি ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। প্রতিদিনের দূষণের মাত্রা প্রতিদিন ঢাকায় রেকর্ড হচ্ছে। এটা বরিশাল থেকে আমাদের দেখার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া কাশিপুর এলাকাতে শব্দ দূষণের মাত্রা পরিমাপের যন্ত্র রয়েছে। সেটাও সরাসরি ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে।

দপ্তরটি সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার ল্যাবে একজন সিনিয়র কেমিস্ট, সহকারী বায়োকেমিস্ট একজন, নমুনা সংগ্রহকারী দুই এবং র‌্যাব এটেন্ডেন্ট একজন থাকার কথা। ইতিপূর্বে তিনটি পদে তিনজন থাকলেও সম্প্রতি সময়ে ঢাকা সদরদপ্তর বদলি করা হয়েছে একমাত্র সহকারী বায়োকেমিস্টকে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) এর সমন্বয়ক লিংকন বাইন বলেন, বরিশালে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় এবং জেলা কার্যালয় রয়েছে। সেখানে লোকবল আছে কিনা সেটা জনগণ শুনবে না। লোকবল না থাকলে বাড়াতে হবে। তার পরেও জনস্বার্থে যেকাজগুলো করণীয় তা পরিবেশ দপ্তরকে করতেই হবে।

তিনি বলেন, নিয়ম রয়েছে প্রতিটি নদীর পানি প্রতি বছর অন্তত ৩-৪ বার পরীক্ষা করবে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু বরিশালে সেটা হচ্ছে না। এমনকি বরিশালে কতগুলো নদী আছে সেই তথ্য বা পরিসংখ্যানও বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে নেই।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল জেলার সভাপতি অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, বরিশালে পরিবেশ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। এদের দায়িত্ব স্ব স্ব অঞ্চলের পরিবেশের অবস্থা জনগণকে জানাবে। এটা জানাতে তারা বাধ্য। কেন পরিবেশের বিপর্যায় হচ্ছে এবং এর প্রতিকারে কি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেটা জনগণের জানার অধিকার আছে। জনবল সংকটতো পূরানো ধারনা। জনবল সংকটের খোড়া অজুহাত দেখিয়ে কোনভাবেই তারা এই কাজ থেকে দূরে সরে যেতে পারে না।

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এএইচএম রাশেদ বলেন, শুরু থেকেই বরিশাল দপ্তরে জনবল সংকট। তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় তা পেরে উঠি না। জনবল বৃদ্ধির জন্য নিয়মিতই ঢাকায় চিঠি লেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন লোকবল বাড়েনি। অবশ্য বরিশাল পরিবেশ দপ্তর খুব শীঘ্রই নিজস্ব ভবনে যাচ্ছে। সেখানে গেলে হয়তো জনবলও বাড়বে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫