সুষ্ঠু ভোট না হলে আত্মহত্যার হুমকি ২ মেয়র প্রার্থীর

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩, ২৩:৪৭

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবুল কাশেম ও এম এ কাইয়ুম ভূইয়া। ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভা নির্বাচনে এক মেয়র প্রার্থী কাফনের কাপড় পরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার (১৫ জুলাই) দেবিদ্বার পৌরসভার চেয়ারম্যান বাড়ির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ হুমকি দেন নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেম। একই দিন এম এ কাইয়ুম ভূইয়া নামে আরেক মেয়র প্রার্থীও (ক্যারাম বোর্ড প্রতীক) বিষ খেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী আবুল কাশেম বলেন, প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নৌকার প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীম নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন নীরব। আমি দুই দিন আগে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-সহ পুলিশের বিরুদ্ধে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধরকে প্রত্যাহার করা আবশ্যক। অন্যথায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেবিদ্বারের স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সরকারদলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীমকে জেতানোর জন্য পৌরসভার কাছাকাছি তার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। পৌরসভার বাইরের সারা দেবিদ্বারের তার সব নেতা-কর্মী ও গুণ্ডা-মাস্তানকে ডেকে নিয়ে তিনি দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারা ভোটের দিন ১৪টি কেন্দ্রে অবস্থান করে আমার একনিষ্ঠ ভোটারদের হুমকি দেবেন, যেন তারা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে না আসেন। এমন হলে ভোট মোটেও অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হবে না।
রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আবুল কাশেম বলেন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন নৌকার প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীমের খুবই ঘনিষ্ঠ। সেই কারণে শামীমের ঘনিষ্ঠদের প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন আপন ভাই। এমতাবস্থায় তারা দুজন মিলে শামীমকে পাস করানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারেন বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি।
একই দিন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এম এ কাইয়ুম ভূঁইয়া বলেন, এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেবিদ্বারের সব নির্বাচনকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছেন। নির্বাচন এখন এমপির কারণে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। এর আগেও হয়নি। ফলে এবার পৌর নির্বাচন এমপির কারণে সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা করছি। এমপি পৌরসভার পাশে বসে নিজের প্রার্থীকে জেতানোর কাজ করছেন। নির্বাচনে যদি তিনি এভাবে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখেন, আমার ভোটারদের ভোট দিতে না দেন, তাহলে বিষপানে আত্মহত্যা করবো। আর লিখে দিয়ে যাবো, এর জন্য দায়ী এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, আমি এসব বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই।
দুই প্রার্থীর অভিযোগের ব্যাপারে এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দেবিদ্বার পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু সীমানা নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় গত প্রায় ২১ বছরেও নির্বাচন হয়নি। এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। এর আগে গত ৩১ মে পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে মেয়র পদে আট, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৯ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে ভোটার রয়েছেন প্রায় ৪৪ হাজার।