Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

লালমনিরহাটে এক সপ্তাহে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত ৫৬২ পশু

Icon

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ১৭:৫২

লালমনিরহাটে এক সপ্তাহে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত ৫৬২ পশু

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত পশু। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাট জেলায় দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগ। গত এক সপ্তাহে জেলায় এ রোগে আক্রান্ত  হয়েছে ৫৬২টি গরু। তার মধ্যে মারাও গেছে কয়েকটি গরু। লাম্পি স্কিন রোগে মৃত্যুহার কম হলেও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে দুগ্ধ ও চামড়া শিল্পে। এ রোগে আক্রান্ত পশুর চামড়া অকার্যকর হয়ে যায়।

জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মশা মাছির মধ্যমে বেশি ছড়ায় লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগ। আক্রান্ত গরু সুস্থ হতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। দিন দিন গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মারাও যায়। আক্রান্ত গাভীর দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে। গ্রাম-গঞ্জের প্রাণী চিকিৎসকরা এক সিরিঞ্জ ব্যবহার করে বিভিন্ন গরু-ছাগলকে টিকা দেন। এতেও সিরিঞ্জের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসে আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন প্রজননে ব্যবহার করলেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। কেবল গরু, মহিষ ও ছাগল লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে মশা-মাছির বেশি বিস্তারের সময় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়। জ্বরের সাথে সাথে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। আর এ ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কখনো ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হয়। শরীরের কোথাও কোথাও ফুলে যায়। যা ফেটে টুকরা মাংসের মতো বের হয়ে ক্ষত হয় এবং পুঁজ বের হয়। পাকস্থলী বা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরুর পানি পানে অনীহা তৈরি হয় এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়। গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। দেশের দুধ উৎপাদনকারী খামারগুলোতে এ রোগের প্রভাব পড়ছে। দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।

এদিকে গরুর ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ ছড়িয়ে পড়লেও এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, খুব সাধারণ চিকিৎসায় গবাদি পশুর এই রোগ সারানো সম্ভব। সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

খামারিরা বলছেন, গরু উৎপাদন বৃদ্ধিতে বৈশ্বিক অবস্থানে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে। গরু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে এই লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে খামারকে মুক্ত রাখা না গেলে এই অগ্রযাত্রায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। এ রোগের কোনো প্রতিষেধক না থাকায় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন খামারিরা। 

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলায় লাম্পি স্কিন এলএসডি রোগে গরু আক্রান্ত হয়েছে ৫৬২টি। মারা গেছে কয়েকটি গরু। আক্রান্ত গরুকে সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। বেশি আক্রান্ত যেনো না হয় সে বিষয়ে বিভিন্ন উপদেশ দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রথম দেখা দেয় ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে। এরপরই মাঠে নামে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তদন্ত টিম। তখন দেশের ১২ জেলায় ৪৮ হাজার গরুর মধ্যে এ রোগের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এখন এই রোগটি দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা যায়। সম্প্রতি আফ্রিকা মহাদেশে ৪০ শতাংশ গরু এ রোগে মারা গেছে বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫