Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম

টোকেন প্রথায় ভেস্তে যাচ্ছে নিষেধাজ্ঞা

Icon

বিলাস দাস, পটুয়াখালী

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩, ১৭:৫২

টোকেন প্রথায় ভেস্তে যাচ্ছে নিষেধাজ্ঞা

ছবি: পটুয়াখালী প্রতিনিধি

মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রকার ভেদে নীতিমালা করেছেন সরকার। এ নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সাগর-নদীতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কর্মহীন জেলেদের দেওয়া হয় ভিজিএফ সহায়তাসহ নানা সহায়তা।

প্রতিবছর সহায়তার খাতে পটুয়াখালী জেলাতে সরকারের শত কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। এরপর সাগর-নদীতে নিযুক্ত মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড নৌ-বাহিনী এবং নৌ পুলিশ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হচ্ছে অনেক টাকা।

প্রশ্ন থাকে- জলসীমায় এত টহল থাকা সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মাছ শিকারের মহোৎসব হয় কীভাবে? অবৈধভাবে মাছ শিকারের অভিযোগে জেল-জরিমানায়ও দণ্ডিত হচ্ছেন জেলেরা। বিগত দিনের তুলনায় চলতি নিষেধাজ্ঞার সময়ে সংশ্লিষ্টদের অভিযান নিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট টোকেন প্রথা চালু করেছেন এ বছর। আর এই টোকেন রক্ষা কবজ নিয়ে নিষেধাজ্ঞায় চলছে মাছ শিকার। যদিও এসব প্রসঙ্গে জেলেদের পক্ষেও রয়েছে নানা অভিযোগ-আপত্তি। জেলে সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজার দর ও ভিজিএফ সহায়তায় বিস্তর ফারাক থাকায় এ নিষেধাজ্ঞা জেলেদের মরণ ফাঁদ হয়েছে। নামমাত্র সহায়তা করে জেলেকে ভঙ্গুর করে কর্মহীন করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞায় সরকারের দ্বৈত নিয়ম নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন জেলেরা। 

অভিযোগ ও অনুসন্ধান বলছে- মৎস্য বিভাগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ড এবং স্থানীয় প্রভাবশালীর সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট এ বছর টোকেন প্রথা চালু করেছে। ট্রলারপ্রতি ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ করে নিষেধাজ্ঞার সময়ে একাধিক ট্রলার সাগরে নেমেছে। একটি মহল নিষেধাজ্ঞায় সাগরে মাছ শিকারের অলিখিত টেন্ডার নিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। এই ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। যারা টাকা দিয়ে টোকেন নিচ্ছে, শুধু তারাই সাগরে যাচ্ছে। আর যারা টোকেন সংগ্রহ না করে নিযুক্ত সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাগরে যাচ্ছে, তারা আইনের আওতায় আসছে। যে কারণে গত ১৪ জুন রাতে কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয় ৩২ জেলে। এরকম বিচ্ছিন্ন ঘটনায় অসংখ্য জেল-জরিমানার তথ্য রয়েছে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন একাধিক জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

এ প্রসঙ্গে আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ৬৫ দিনসহ নানা নিষেধাজ্ঞা আমাদের দেশের জেলেরা মানলেও ভারতের জেলেরা মানছে না। যে কারণে নিষেধাজ্ঞা পালনে প্রতিবন্ধকতা চলছে। নিষেধাজ্ঞার মাস ও সময়ের সাম্যতা এবং বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভিজিএফ সহায়তা বাস্তবায়ন করা উচিত। অথবা অবরোধকালে কর্মহীন জেলেদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। মৎস্য ভাণ্ডার রক্ষা করতে হলে জেলেদের প্রতি সরকারকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

অপরদিকে জেলা মৎস্য বিভাগ ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীতে ভিজিএফ আওতায় ৭৩ হাজার ৭৭৭ জেলে রয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে ৪৭ হাজার ৩৭১ জন। নানা ক্যাটাগরিতে ভিজিএফ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। বিগত সরকারের ভিজিএফ সহায়তা ১০ কেজির পরিবর্তে বর্তমান সরকার ৪০ কেজিতে উন্নীত করেছেন। আগের তুলনায় অধিক জেলেকে ভিজিএফ তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও চালের পাশাপাশি জেলেকে গরু, নৌ-বোড এবং উন্নত মানের জাল দেওয়া হয়েছে। এসব মিলিয়ে জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর শত কোটি টাকার গচ্চা দিচ্ছে শুধু পটুয়াখালীতে। তার পরেও এ শ্রেণির জেলেরা রাতের আঁধারে মাছ ধরছে। 

এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সাগরে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এত অভিযানের পরও সুযোগ সন্ধানী জেলেরা নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরছে। আটক করে তাদের জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। অভিযান সম্পর্কে যে অভিযোগ উঠেছে তা আদৌ সত্য নয়। পার্শ্ববর্তী ভোলা-বরগুনা এবং ভারতের জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এসব বন্ধ করতে জেলা থেকে উদ্যোগ নিলে হবে না। ভারত এবং অন্য জেলা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পটুয়াখালীতে নেই।

ঢাকা শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ একোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকার দেশের মৎস্য সম্পদের উন্নতির অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছেন। অথচ মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে। এ মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত হলে শুধু সরকার ও দেশ নয়, কর্মহীন হবে জেলেরাও। প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধিসহ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যই সরকার এই অবরোধ দিয়েছেন। এসময়ে মাছ ধরা মানে মাছের বংশ ধ্বংস করা। এটা জেলে গোষ্ঠীকে বোঝাতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫