Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

মেহেরপুরে মামলা জটিলতায় আটকে আছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

Icon

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ২০:১২

মেহেরপুরে মামলা জটিলতায় আটকে আছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। ছবি: মেহেরপুর প্রতিনিধি

মামলা জটিলতায় ৪ বছর আটকে আছে মেহেরপুরের গাংনীতে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার প্রকল্পের ২৩টি ঘর। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরেও ঘরগুলো বুঝে না পাওয়ায় এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ঘরের মূল্যবান সামগ্রী।

পরিবারগুলোর অভিযোগ- গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নির্মিত ২০টি ঘর আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রশাসন ঘরগুলো তাদেরকে বুঝে দেয়নি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সুরাহা না হলে তাদের কিছুই করার নেই।

সরেজমিন গাংনীর মোহাম্মদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়- মোহাম্মদপুর গ্রামের পশ্চিমপার্শ্বে মরা নদীর পাড়ে একটি মাঠের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে ২০টি চারচালা ঘর নতুন নির্মিত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ঘর আজও বুঝে না পাওয়ায় সব ঘরের জানালা, দরজা খোলা। ঘরের ভিতর নতুন রঙ করা দেওয়ালে নানান কিছু লেখা দেখে বোঝা গেল ঘরগুলো এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়েছে। বিভিন্ন ঘরের পানি নিষ্কাশন এবং আবর্জনা পরিষ্কার কাজের জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সব পাইপ চুরি হয়ে গেছে। গৃহহীনদের জন্য থাকার অনেক ঘরে এখন গবাদিপশুর আবাসস্থল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। অথচ- অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা ঘরগুলো সংরক্ষণের জন্য কোনো লোক নেই বলে জানালেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয়রা জানান, ৪ বছর আগে মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের ১ নং খতিয়ানের ৫৯২০ নং দাগে ২০টি এবং ষোলটাকা ইউনিয়নের কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবারের জন্য ৩টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি ঘর নির্মাণ আশি শতাংশ শেষ হওয়ার পর স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল কাশেম আদালতে জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করলে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে- মোহাম্মদপুর গ্রামের ২০টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রশাসন বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ঠিক তখন বাঁধার মুখে পড়েন প্রশাসন। গ্রামের প্রভাবশালী সাবেক সেনা সদস্য আবুল হোসেন মেলেটারী ১নং খতিয়ানের ৫৯২০ দাগের ওই জমি তার নিজের দাবি করে আদালতে মামলা করলে আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। এতে নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও ২০টি ঘর গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। 

মোহাম্মদপু গ্রামের মহেরুন নেছা জানান, আমরা গরীর মানুষ। জমিজমা নেই। ঘরগুলো পেলে ছেলিপেলি নিয়ে একটু শান্তিতে বাস করতে পারতাম।

আলফাতুন খাতুন জানান, সরকার আমাদের জন্য ঘর করেছে ঠিকই। এখন প্রশাসনের লোকজন ঘরগুলো তাদের বুঝে দিতে না পারার কারণে তারা ঘরে উঠতে পারছে না। ফলে, ঘরের ভাড়া দিতে গিয়ে এখন মুখে ভাত উঠছে না। ঘরগুলো পড়ে থেকে এখন নষ্ট হচ্ছে। অনেক কিছু চুরি হয়ে যাচ্ছে। ঘরগুলোতে এখন মাদকসেবীদের আড্ডা বসে প্রতিদিন।

একই গ্রামের তকলিমা বেওয়া জানান, ঘর নাকি সরকারী জায়গায় না করে মানুষের জায়গায় করেছে। তাই জমি মালিকরা মামলা করেছে। এ কারণে এখন তারা চোখে ঘর দেখলেও সেখানে যেতি পারছে না।

গ্রামের সাব্বির সারোয়ার জানান, ঘর নির্মাণ শেষ হলো। ঠিক যখন বিদ্যুতের সংযোগ দিতে লোক আসলো ওইদিন বাধা আসলো। তখন জানা গেল জমি সরকারের না পাবলিকের। জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করায় এখন ঘরে যেতে পারছে না কেউই। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চায়।

মোহাম্মদপুর গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য আবুল হোসেন মেলেটারী জানান, আমার বাপ দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি ওটা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল ফলিয়েছি। লক ডাউনের সময় হঠাৎ করে জোরপূর্বক আমার জায়গা দখল করে ঘর তৈরি করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমরা ওই ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগাতে দেইনি। পরে- মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করি। আদালত দলিলপত্র দেখে ২০টি ঘরের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

কাষ্টদাহ গ্রামের আবুল কাসেম জানান, জমির একাংশের মালিক আমি। তার জমিতে ভূমি অফিস অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করায় আদালতে মামলা করি। আদালত ৩টি ঘরের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সরকার অর্পিত সম্পত্তিতে ঘর না করে মানুষের সম্পত্তিতে ঘর করলে মানুষ কি ছেড়ে দিবে। স্থানীয় প্রশাসনের ভুলের কারণে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত সরকারী ঘর আজ নির্মাণ শেষ হবার পরও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু জানান, আমরা জমির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় দুইজন আদালতে মামলা করেছে। তাই গৃহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে গেছে। খুব শীঘ্রই আদালতের রায় হওয়ার কথা রয়েছে। আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২৩টি ঘর হস্তান্তর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কিছুই করার ক্ষমতা নেই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫