
আটক হওয়া আসামিরা। ছবি: মাদারীপুর প্রতিনিধি
মাদারীপুরের কালকিনিতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে কবির হাওলাদার (৬০) নামে এক কৃষককে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করায় এক নারীসহ চার জনকে আটক করেছে মাদারীপুর ও কালকিনি থানা পুলিশ।
নিহত কবির হাওলাদার পৌর এলাকার দক্ষিণ জনারদন্ধি গ্রামের আলতাজউদ্দিন হাওলাদারের মেজ ছেলে। গতকাল শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় মাদারীপুর কালকিনি পৌর এলাকার দক্ষিণ জনারদন্ধি গ্রামে হত্যার ঘটনা ঘটে। আজ রবিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে কালকিনি থানার হল রুমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউল হাসান।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কবির হাওলাদারের সঙ্গে তার আপন ছোট ভাই মাদারীপুর কোর্টের মুহুরী এইচ এম সবুরের বেশ কিছুদিন ধরে বাড়ির জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে রীতিমত উত্তেজনা চলছিলো। শনিবার সন্ধ্যায় ওই জমিজমা নিয়ে পুনরায় উভয়পক্ষের মাঝে কথার কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় সবুর পুরোপুরি ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলেদের সাথে নিয়ে কবির হাওলাদারকে ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেন এবং গলাকেটে মাটিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় কবির হাওলাদারকে কালকিনি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর খুনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় সবুর হাওলাদার, সবুর হাওলাদারের স্ত্রী লিপি বেগম এবং তার দুই ছেলে আসালিম ও আসলামকে আটক করেছে।
পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান আনিস বলেন, সবুর পেশায় একজন কোর্টের মুহুরী। সে তার আপন ভাই কবিরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
নিহতের ভাতিজা সাব্বির জানান, এই দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রায় জমি নিয়ে ঝগড়া হতো এবং প্রায় সবুর হাওলাদার ও তার ছেলেরা মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসতো। শনিবার ধানের জমি দেখতে গেলে সেখানে কথা-কাটাকাটি হওয়ার এক পর্যায় কবির কাকাকে সবুর কাকা সহ তার দুই ছেলে ছুরি দিয়ে আঘাত করে ফেলে রেখে যায়। আমার হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার কাকাকে মৃত্যু বলে জানান। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি চাই।
মামলার বাদী ও মৃত্যু কবির হাওলাদারের ছেলে ফরিদ হাওলাদার বলেন, আমি চারজনকে আসামি করে মামলা করেছি, চারজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি চাই। ওরা নরপশু, নরপশু না হলে নিজের ভাই, নিজেদের চাচাকে কিভাবে গলা কেটে হত্যা করে।
কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার সুস্মিতা রায় জানান, আমাদের এখানে যখন নিয়ে আসে তখন তার গলায় ছুরি আঘাত ছিলো প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে বুঝতে পারি ছুরি আঘাতে শ্বাসনালী কেটে গেছে এবং বুকের উপরে অনেক ছুরির আঘাত রয়েছে। ইসিজি করে বুঝতে পারি আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি মারা গেছেন।
মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.আলাউল হাসান সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা হত্যার ঘটনার অপরাধে একে নারীসহ চারজনকে আটক করেছি। আজ রবিবার মামলা রুজু হলেও আমরা গতকাল তাৎক্ষণিক অপরাধীদের আটকের জন্য অভিযান শুরু করি এবং মামলার চারজন আসামিকেই আমরা গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। আমরা চারজনকে আদালতে পাঠাবো।