টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ধস

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ২০:০৬
-64cfa8c94360b.jpg)
টানা বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে চলছে ধসে পড়া মাটি সরানোর কাজ। ছবি: রাঙামাটি প্রতিনিধি
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে টানা বৃষ্টিপাতের প্রভাবে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে মাটি ধসে পড়েছে।
আজ রবিবার (৬ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিষমারা এলাকায় পাহাড়ের ওপর থেকে সড়কে মাটি ধসে পড়েছে। তবে সওজ দ্রুততার সাথে মাটি সরিয়ে ফেলায় সড়কে যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটেনি।
এর আগে, গত শনিবার সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটির ঘাগড়া-বরইছড়ি সড়কে মাটি ধসে পড়ে। রাতে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা মাটি অপসারণে কাজ শুরু করলেও সকালে সওজ সব মাটি সরিয়ে দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসাবে জেলার ৪৬টি স্থানে ছোট-বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে কাপ্তাই উপজেলার ২৭টি স্থানে।
এছাড়া আজ সকালে জেলা শহরের রাঙাপানি যুব উন্নয়ন এলাকায় সড়কের পাশে মাটি ধসে পড়ায় একটি বিদ্যুতের খুঁটি সরে পড়েছে। এতে করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে পড়ায় জেলার শহরের বিভিন্ন এলাকায় সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালনা বন্ধ থাকে। অন্যদিকে, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজলার বাঘাইহাট-মারিশ্যা সড়কে সকাল ১১টার দিকে সড়কের ওপর মাটি ধস ও গাছপালা ভেঙে পড়ে। এতে করে ওই সড়কে ঘন্টাখানেকের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) রাঙ্গামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, টানা বর্ষণের ফলে বিভিন্ন সড়কে মাটি ধসে পড়ছে। রোববার সকালে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাটি ধসে পড়েছিল। পরে আমরা সড়ক বিভাগের জনবল দ্রুত মাটি সরিয়ে নিয়েছি। মাটি সরাতে কিছুক্ষণ সময় লাগলেও সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেনি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আক্তার বলেন, সকাল ১১টার দিকে বাঘাইহাট-মারিশ্যা সড়কে মাটি ধস ও গাছ পড়ে ঘন্টাখানেকের পর যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। মাটি সরানোর পর ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) রাঙ্গামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল রহমান বলেন, জেলা শহরের রাঙাপানি এলাকায় একটি বিদ্যুতের খুঁটি মাটিসহ নিচের দিকে দেবে গিয়েছিল। যে কারণে তবলছড়ি মাঝের বস্তি সাব-স্টেশনের অধীনে থাকা তবলছড়ি ও রিজার্ভবাজার এলাকায় দুই ঘন্টার মতো বিদ্যুৎ ছিল না। পরে সেটি সঠিক করার পর বিদ্যুৎ সঞ্চালনা দেয়া হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ বাড়ছে
গত শনিবার সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটি জেলা শহরের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা মানুষের উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেলেও রাতে প্রশাসন সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিল।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পুরো রাঙ্গামাটি জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা ৩ হাজার ৫০৯টি। জেলায় মোট আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ২৩৬টি। জেলার ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ১৯১ আশ্রয় নিয়েছেন, এরমধ্যে শহরের ৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ৫০৬ জন। এছাড়া জেলার ৪৬টি স্থানে ছোট-বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও সহকারী কমিশনার বিজয় কুমার জোয়ার্দার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, জেলা শহরের ৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঝুঁকিতে থাকা মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া মানুষদের আমরা তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি দেখছি। আমি নিজে ও পুলিশ সুপারসহ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করছি।
এদিকে রাঙ্গামাটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘন্টায় রাঙ্গামাটিতে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার ৭৭ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং শনিবার ১৪৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬১ দশমিক ৮মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।