Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

দোকান বরাদ্দের নামে বড়গাছী হাটে লুটপাটের অভিযোগ

Icon

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৭:৩১

দোকান বরাদ্দের নামে বড়গাছী হাটে লুটপাটের অভিযোগ

রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বড়গাছী হাটে চলছে স্থায়ী পাকা দোকানঘর নির্মাণ। ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি

সরকারি নিয়ম না মেনে হাটে স্থায়ী পাকা দোকানঘর নির্মাণ ও বরাদ্দের নামে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বড়গাছী হাটের বাজার কমিটির সভাপতি এমদাদ ও সেক্রেটারি আফজালের বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ আছে যে সেখানে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে হাটের জায়গা নিয়ে বাণিজ্য চলছে। বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এসব অনিয়মে ইউএনও ও এসিল্যান্ডসহ সরকারি কর্মকর্তাদের নাম ভাঙানো হচ্ছে । 

আজ সোমবার (৭ আগস্ট) বড়গাছী হাটে সরেজমিনে গেলে সংবাদকর্মীদের এরকমই বলছিলেন হাটের প্রকৃত ব্যবসায়ী ও আশপাশের সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, সরকারি নিয়মবর্হিভূতভাবে হাট বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন বর্তমান বাজার কমিটির সভাপতি এমদাদ ও সেক্রেটারি আফজাল। এমদাদ পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও তার ছেলে বড়গাছী ৮ নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাগরের প্রভাবে সরকারী খাস জায়গায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাটের বরাদ্দকৃত জায়গা বিক্রি করছেন।

স্থানীয় প্রভাবশালী ঐ মহলটি বড়গাছী হাটে সরকারি খাস জায়গায় ৩২টি পাকা দোকানঘর নির্মাণ করছেন। হাটে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা করা ব্যবসায়ীদের সুযোগ না দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নামে হাটে বেসরকারিভাবে তৈরি প্রতিটি দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে।

প্রায় কোটি টাকার হাট-বানিজ্যে ইউএনও ও এসিল্যান্ড এর নামে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের কমিশন। প্রকাশ্যে এসিল্যান্ডের বরাদ্দে দোকানঘর বিক্রি ও কে কত ভাগ কমিশন পাচ্ছেন তা জানিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী দোকানদাররা।

আবার পুরনো স্থাপনাগুলো ভেঙে কোনরকম টেন্ডার ছাড়াই রড, ইট, সাটার, জানালা,এঙ্গেলসহ অন্যান্য পুরনো জিনিসপত্র বিক্রিতেও সরকারি প্রায় ২০-২৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।

এদিকে ভুক্তভোগী দোকানদাররা এ বিষয়ে আদালতে মামলাও করেছেন। মামলা করায় এমদাদের ইন্ধনে সাজ্জাদ নামে একজন পাকা দোকানঘর বরাদ্দ নেওয়া আরেক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পবা থানায় চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলাও করেছেন। এমনই অভিযোগ করলেন হাটের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। 

জানা যায়, বড়গাছী হাটে পুরাতন টিনসেড বাজার ভেঙে ফেলে নতুনভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে বাজার সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। এর আগে পবার এসিল্যান্ড খবর পেয়ে পাকা দোকানঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। পরে তিনি মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করার অলিখিত অনুমোদন দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অলিখিত অনুমোদন পাওয়ার পর বাণিজ্যের হোতারা এসিল্যান্ডের সামনেই ঐ ইউনিয়নের ২ নং ইউপি মেম্বার সফিকুলকে মারধর করেন।

কেননা তিনি হাটে অবৈধভাবে ব্যক্তি উদ্দ্যোগে পাকা দোকানঘর নির্মাণ ও তা ৯৯ বছরের জন্য ব্যবসায়ীদের ভুল বুঝিয়ে বরাদ্দের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি সরকার কর্তৃক পূর্বের নির্মাণ করা দোকানঘর বরাদ্দ নেওয়া (মালিক) বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে তাঁর দোকান ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসন। ইতোমধ্যে পূর্বের সরকার কর্তৃক নির্মাণ করা কয়েকটি দোকানঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে উক্ত বিষয়ে এমদাদ, শাহাদাত হোসেন সাগরসহ আরো ৪ জনের বিরুদ্ধে সফিকুল ইসলামের বড় ভাই শহিদুল আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বড়গাছী হাটের জায়গায় থাকা সরকারিভাবে নির্মিত ৬ পাকা টিনসেড, ২টি সম্পূর্ণ ও ৪টি অর্ধেকসহ দোকানপাট নোটিশ দিয়ে ভাঙিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। হাটের সরকারি এসব স্থাপনা ভেঙ্গে টিন, লোহার এ্যাঙ্গেল, রড, ইট কোন টেন্ডার ছাড়াই প্রশাসনের নিরব সহযোগিতায় হাট সভাপতি এমদাদ বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যার আনুমানিক মূল্য ২০-২৫ লাখ টাকা।

ভাঙ্গা জায়গায় সরকারি কোন প্রকল্প না থাকলেও নিজেদের পকেট ভরাতে ৩২টি দোকানঘর নির্মাণ কাজ চলছে। এই দোকানগুলি যার টাকা আছে, তিনিই পাচ্ছেন। টাকা না থাকলে ব্যবসায়ীরাও দোকান পাচ্ছেন না। ওই বাজারে বাকি পাকা টিনসেডগুলোও ভেঙ্গে ঘর নির্মাণ করা হবে। সেগুলিও বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

ভুক্তভোগী অনেক ব্যবসায়ীর মত, বড়গাছী হাটে ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে ভাতের হোটেল ব্যবসা করেন শামিম (২৮)। তিনি বলেন, আমি দোকানঘর নিতে হাট কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নগদ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমার মত যারা ঘর নিচ্ছেন তাদের প্রত্যেককে টাকা দিয়েই নিতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে দোকান না থাকলেও বড়গাছী বাজারে অনেকে জায়গা বরাদ্দ পেয়েছেন। তাঁদের দোকান ঘর বরাদ্দ নিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেড় থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। আগে থেকে কারও দোকান থাকলে তাকেও টাকা দিয়ে ঘর নিতে হচ্ছে যার পরিমাণ সর্বনিম্ন ৭০ সত্তর হাজার টাকা। পূর্বের অনেক দোকানদার টাকা দিতে চাইলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পজিশন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কারণ হিসেবে জানা গেছে সামনের সারির দোকানগুলো আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে আগেই বেচে দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে, হাট কমিটির সভাপতির ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান সাগর বলেন, সরকারি ফরমে আবেদনের মাধ্যমে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দোকানঘর সরকারি ফি দিয়ে বরাদ্দ নিবেন। বেশি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। একটি পক্ষ মিথ্যাচার করছেন। কেউ প্রমাণ করতে পারলে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেবো। তবে হাটে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। এখানে ইউনিয়নের কিছু নাই, সব উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কাজ হচ্ছে। পুরাতন টিনসেডগুলো একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে। 

বাজার কমিটির সভাপতি এমদাদ হক বলেন, আমি হাটটি ইজারা নিয়েছি। হাটের উন্নয়নে সকল দোকানদারের সম্মতিতে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। পাকা দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে যা খরচ হচ্ছে তা বরাদ্দ পাওয়া দোকানদারদের নিকট থেকে নেওয়া হবে। 

টাকা লেনদেনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে পবার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) অভিজিৎ সরকার বলেন, হাটটি নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে। টাকা লেনদেনের বিষয়টি সঠিক নয়। তবে কেউ যদি এমন করেন বা ভুক্তভোগীরা যদি লিখিতভাবে অভিযোগ দেয় তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি আইন অমান্য করে অনিয়ম করা হয়, তবে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লসমী চাকমার সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি একবার ফোন রিসিভ করেন। তবে ঘটনার বিষয় শুনে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর তাঁর অফিসে দেখা করতে গেলে তিনি দেখা করেননি বলে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫