টানা বৃষ্টিতে বান্দরবান শহর প্লাবিত, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ২০:২৫

ছবি: প্রতিনিধি
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বান্দরবান শহর প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলা শহরে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, সদর উপজেলা কার্যালয়, ফায়াস সার্ভিস, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চীফ জুডিসিয়াল কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও বিআরটিএ অফিস হাঁটু সমান পানি উঠেছে।
সড়কের পানি উপর পানি উঠায় রবিবর (৬ আগস্ট) সকাল থেকে বান্দরবান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার দূর পাল্লা বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এছাড়া জেলা শহর থেকে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রবিবার রাত থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সমস্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারন্টে সেবা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আজ মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবানের সার্বিক দুযোর্গ পরিস্থিতি নিয়ে একটি লিখিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে।
টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান শহর এলাকার ৬০ ভাগ প্লাবিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘন্টায় বান্দরবান সদরে ১৯২.৫ মিলিমিটার এবং লামায় ২২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ২২০ সেন্টিমিটার এবং সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার ৩৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা ছয় দিনের বৃষ্টিপাতের কারনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পাহাড় ধসে প্রায় ৪৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৯ হাজার ৫০০ জন আশ্রয় নিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাহাড় ধসের ঘটনায় একজন রোহিঙ্গা নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে পাহাড় ধরে পৃথক ঘটনায় ছয়জন আহত হয়েছে। আহতদের দুজন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত। বাকী চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরেছে। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে আলীকদম উপজেলা নয়াপাড়া ইউনিয়ন থেকে মো. মুছা (২২) নামে এক ব্যক্তির লাম উদ্ধার করা হয়। এছাড়া মেমপই ম্রো (৩০) নামে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার রিংও পাড়ার এক বাসিন্দা পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে।
সাংবাদিকদের দেওয়া জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ফায়ার সার্ভিসসহ জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে ইতিমধ্যে ২-৩ ফুট পানি উঠেছে। এছাড়া পুলিশ সপুার বাসভবন ও কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় প্লাবিত হয়েছে। জেলার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাড়া বাকী ছয়টি উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় মোট ২০৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতিমধ্যে ৮৫ মেট্রিকটন এবং ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও অতিরিক্ত ত্রাণ বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল রেসপন্স টিম এবং প্রত্যেক উপজেলয় কুইক রেসপন্স টীম গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মঙ্গলবার দুপুরে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসন ও সেনাবহিনীর জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, বান্দরবানে সপ্তম দিনের মত বৃষ্টি হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনীর সাথে বৈঠক করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। তারা আমাদের কাছে যে সমস্ত রিকোয়ারমেন্ট চেয়েছে আমরা সেগুলো দিয়েছি। তার মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সেটা যাতে না হয় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যে সমস্ত আশ্রয়কেন্দ্র মানুষ রয়েছে সেখানে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কোথাও খাবার পৌঁছায়নি এখন পর্যন্ত এ ধরণের কোন অভিযোগ বা রিপোর্ট আসেনি।
তবে সবচেয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লামা উপজেলা। লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্স পানিতে প্লাবিত হয়েছে। খাদ্যগুদামও প্লাবিত হয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব সেখানে ত্রান সামগ্রীসহ অন্যান্য সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার। তবে মোবাইল এবং ইন্টারসেবা এখনও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।