Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

সুবর্ণচরে প্রবেশপত্র আটকে শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

Icon

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১৪:২২

সুবর্ণচরে প্রবেশপত্র আটকে শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

প্রবেশপত্র আটকিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার অভিযোগে বিক্ষোভ শিক্ষার্থীরা করেছে। ছবি: নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকিয়ে শিক্ষার্থী প্রতি ৭০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

গতকাল সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কলেজ অধ্যক্ষের (ভারপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর  হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, আগামী ১৭ আগস্ট থেকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। নোয়াখালীর সুবর্নচর উপজেলার চরজব্বর ডিগ্রী কলেজ থেকে চলতি বছর ৫৮১ জন শিক্ষার্থী  উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটক রেখে ৭০০ টাকা হারে কলেজ কর্তৃপক্ষ চাঁদা আদায় করছে। যেসকল শিক্ষার্থীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী ৭০০ টাকা চাঁদা দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে তাদের প্রবেশপত্র আটক করে রাখা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষার্থীরা সোমবার সকালে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলে। এক পর্যায়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৭০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা হারে প্রবেশপত্র দিতে রাজি হলে শিক্ষার্থীরা বিকেলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন যাবত চরজব্বর ডিগ্রী কলেজে নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সভাপতির ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। জেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বোর্ড থেকে কোনো তদন্ত এলে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সরকারী ভর্তি নীতিমালা উপেক্ষা করে কলেজ কোটার অতিরিক্ত  শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। শিক্ষার্থী ভর্তি হতে রশিদ ছাড়া নামে-বেনামে ফি আদায় করছে। বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও সরকারী উপবৃত্তির ফরম বিক্রি, প্রশংসাপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট ও সনদ নিতে ৫০০ টাকা হারে আদায় করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোরবানির পশুর হাট নিষিদ্ধ থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা অমান্য করে প্রতিবছর কলেজ মাঠে গরু বাজার বসায়। করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাত থেকে আসা অনুদান আত্মসাৎ করা হয়। 

পরীক্ষার্থী দিদার হোসেন বলেন, প্রবেশপত্র নিতে ৭০০ টাকা হারে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাপ সৃষ্টি করে আদায় করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আন্দোলন করেছি। এতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ ফরহাদ আমাকে বিভিন্ন প্রকার ধমক দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাসানোর হুমকি দিয়েছেন। এছাড়াও আমার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার ও হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করে ৭০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা হারে প্রবেশপত্র দিতে রাজি হলে  আমরা পরীক্ষার কথা চিন্তা করে আন্দোলন স্থগিত করেছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির নির্ধারিত হার সর্বোচ্চ ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা হলেও এই কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়।  

এব্যাপারে চরজব্বর ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ ফরহাদের সাথে কথা বলার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। 

সুবর্ণচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল করিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত রবিবার শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিলো। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। ইউএনও রবিবার জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাইজদী অবস্থান করায় এব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। সোমবারের বিষয়টি আমার জানা নেই।

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৈতি সর্ববিদ্যা বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের বিষয়টি জেনেছি। প্রবেশপত্র আটক রেখে টাকা আদায় করা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। এব্যাপারে আমি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এব্যাপারে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জামাল নাসের বলেন, প্রবেশপত্র বাবদ কোনো টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। কোন প্রতিষ্ঠান যদি এই বেআইনিভাবে টাকা আদায় করে থাকে তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫