Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

প্রকল্প শেষ না হতেই বৃষ্টিতে ধুয়ে নামছে বেড়িবাঁধ

Icon

বিলাস দাস, পটুয়াখালী

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩, ১৬:০৯

প্রকল্প শেষ না হতেই বৃষ্টিতে ধুয়ে নামছে বেড়িবাঁধ

ছবি: পটুয়াখালী প্রতিনিধি

পলিমাটি দিয়ে বেড কেটে নিষিদ্ধ ড্রেজার ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। নির্মিত বেড়িবাঁধে বনায়ন ও ঘাস রোপণে ঢেকে গেছে বালু ব্যবহারের চিত্র। তবে প্রকল্প শেষ না হতেই বৃষ্টিতে সেই বাঁধ ধুয়ে নামতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও দায়িত্বরতরা এসব অভিযোগ এড়িয়ে যাচ্ছেন। মেগা প্রকল্পে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি সচিত্র গণমাধ্যমে তুলে ধরা হলেও কাজের ধরন বদলায়নি। বরং বালু দিয়েই বেড়িবাঁধ সংস্কার হয়েছে। বাঁধের স্লোব থেকে বালু উত্তোলনে সৃষ্ট খানাখন্দ ভরাটের শর্ত থাকলেও তার বাস্তবায়ন ঘটেনি। যেনতেনভাবে কাজ হলেও শতভাগ বিল দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। 

সূত্র বলছে, চুক্তি ভিত্তিক তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগের কারণে এমন অনিয়ম হয়েছে। বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ সংস্কারে এমন অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৮ নাম্বার পোল্ডারটি বঙ্গোপসাগর ও নদী বেষ্টিত। এই পোল্ডারের আওতায় বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলটি লতাচাপলি ও ধুলাশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ এবং কুয়াকাটা পৌরসভার অন্তর্গত পর্যটন নগরী। দুটি ইউনিয়ন একটি পৌরসভায় অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ষাটের দশকে নির্মিত এ বাঁধটিতে পরে কোনো সংস্কার হয়নি বলে দাবি আদিবাসীদের। বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছ্বাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীর জানমাল রক্ষাকবজ দীর্ঘতম এই বাঁধটি। এছাড়াও উপকূলীয় জনপদে বেড়িবাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। পরে কুয়াকাটা পর্যটন নগরী হলে বাঁধটির ব্যবহার ও গুরুত্ব বাড়ে। ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া খাজুরা সৈকত পয়েন্ট থেকে গঙ্গামতি, কাউয়াচর সৈকত পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটারই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। 

পাউবো ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূল জুড়ে দীর্ঘ ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ উন্নয়নের কাজ পায় চায়না সিকো নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এ কাজ শুরু করে সিকো। কিন্তু সিকো সরাসরি কাজটি না করে দালাল চক্রের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যক্তিদের বাঁধ উন্নয়নে নিয়োগ করেন। ৩৮ কিলোমিটারের বাঁধকে কয়েকটি ভাগে সাব চুক্তিতে দেন সিকো। প্রাক্কলনে বাঁধে ৩০ ভাগ বালু, ৬০ ভাগ পলি মাটি এবং ২০ ভাগ কাদামাটি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এছাড়াও কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম পাশে লেম্বুরচর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার বিশেষ পদ্ধতিতে ব্লক স্থাপনের কথা উল্লেখ রয়েছে এবং বাঁধের মূল ভূখণ্ড থেকে বাঁধের উচ্চতা প্রায় ৭.৫ মিটার এবং একই পরিমাপ বজায় রেখে স্লোব এবং বাঁধের উপরিভাগে ৬ মিটার প্রশস্ততা রাখার কথা রয়েছে প্রাক্কলনে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৮ কোটি টাকা। অথচ প্রাক্কলনের ৫০ শতাংশ নিয়ম মানা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরনো বাঁধের স্লোব থেকে দেশীয় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বাঁধ সংস্কার হয়েছে। মাটি দিয়ে বেড তৈরি করে বালু ভরাটের পর মাটির আস্তর দিয়ে ঢেকে গাছ ও ঘাস রোপণ করা হয়েছে। বাঁধের স্লোব থেকে ১৫ মিটার দূরত্ব রেখে মাটি কাটার নিয়ম থাকলেও স্লোব লাগোয়া জমি থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। এসব দৃশ্য এখনো বিদ্যমান। 

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, প্রকল্পের শুরু দিকে অনিয়ম করলে সিইআইপির প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, প্রকল্পটি পিডি অফিস কর্তৃক নিযুক্ত কনসালট্যান্ট তদারক করছেন। তবে শর্তানুযায়ী ত্রুটিপূর্ণ কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেবেন। 

বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সেআইপি) সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ বলেন, যেখানে বালু ধরা, সেখানে বালু দিচ্ছে, যেখানে মাটি ধরা সেখানে মাটি দিচ্ছে। বৃষ্টির দিনে একটু ধুয়ে নামছে, এটা ঠিক করা হবে। বাঁধের স্লোব পাশের খানাখন্দগুলোও ঠিক করা হবে। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, বিষয়গুলো দেখব।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫