সরকারি উন্নয়নসহ নানা অজুহাতে একের পর এক কাটা হচ্ছে বরিশালের শোভাবর্ধণকারী গাছগুলো। যার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শতবর্ষী গাছ। এরই মধ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গড়িয়ারপাড় থেকে রূপাতলী পর্যন্ত বেশ কিছু গাছ কাটা হয়েছে।

বর্তমান বরিশালের সীমান্তবর্তী গৌরনদীর ভুরঘাটা থেকে বরিশাল নগর সীমান্ত পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার মহাসড়কের পাশে থাকা গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এর ফলে এসব এলাকা জলাভূমিতে পরিণত হচ্ছে।

বরিশাল বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বরিশাল এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলাতেই গত ৮ বছরে সর্বোচ্চ ৫২ কিলোমিটার সড়কের গাছ কাটা হয়েছে। সবগুলোই কাটা হয়েছে সড়ক উন্নয়ন বা বর্ধিতকরণ কাজের জন্য। এর অনুকূলে দুই উপজেলার ৫৯ কিলোমিটার সড়কে আট বছরে সরকারিভাবে ৫৯ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা। এর বাইরে একই সময় রোপণের জন্য বিনামূল্যে ৬২ হাজার ৯৮৫টি গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।

তবে উন্নয়ন এবং মহাসড়ক ঝুঁকিমুক্ত করতে সড়কের পাশ থেকে শোভাবর্ধক শতবর্ষী গাছ কাটা হলেও সেখানে নতুন করে গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে না। ফলে ভবিষ্যতে বরিশালের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল জেলার সীমান্তবর্তী গৌরনদীর ভুরঘাটা থেকে বরিশাল নগরীর দপদপিয়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে থাকা শতবর্ষী গাছগুলো কাটা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রেইনট্রি, মেহগনি, কড়াইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। গাছগুলো আয়তনে যেমন অনেক মোটা তেমনি উচ্চতায়ও বিশাল।

অপরদিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নগরীর ওয়াপদা ও বিআইপি কলোনিতে অর্ধশতাধিক বছর বয়সী আরও ১২৯টি গাছ কাটার প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ইতিপূর্বে গাছগুলো বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান এবং মূল্যায়ন শেষে পুনরায় অর্থাৎ দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরও টনক নড়ছে না পরিবেশবাদী, এমনকি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের।

বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া থেকে তালুকদার হাট এবং তালুকদার হাট থেকে বাকেরগঞ্জের নলুয়া পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও বর্ধিত করা হয়। এ জন্য সড়কের দুই পাশের বিপুল সংখ্যক গাছ কাটা হয়েছে। তাছাড়া গত আট বছরে যত সংখ্যক গাছ কাটা হয়েছে সেগুলো সড়ক, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডির অধীনস্থ গাছ ছিল।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বরিশাল জেলার সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, গাছ কাটার ক্ষেত্রে যেমন নিয়ম রয়েছে, তেমনি লাগানোর ক্ষেত্রেও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন।

বরিশাল বন বিভাগের বরিশাল ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে যেমন গাছ কাটা হচ্ছে, তেমনি সরকারিভাবে গাছের চারাও রোপণ ও বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।