Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

১২ বছরের শিশু এখন কন্যা সন্তানের মা

Icon

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪১

১২ বছরের শিশু এখন কন্যা সন্তানের মা

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের গুরুদাসপুরে ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির সেই শিশুটি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। 

গতকাল শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতকটির জন্ম দিয়েছে ১২ বছরের শিশুটি। মা এবং নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছে।

জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নার্গিস তানিমা ফেরদৌস ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ফেরদৌস রহমানসহ ছয় সদস্যের চিকিৎসক টিম শিশুটির অপারেশন করেন।

জানা গেছে, কন্যা শিশুকে দত্তক নিতে হাসপাতালে অনেকে আসছেন।

ছাত্রীর দাদী হালিমা খাতুন জানান, আমি গরিব মানুষ অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাই। প্রয়াত স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস কিছুদিন আগে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তা দিয়ে তার খরচ করেছি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নার্গিস তানিমা ফেরদৌস জানান, স্কুলছাত্রীর অনেক কম বয়স। ফলে মা ও নবজাতক শিশুকে নিয়ে আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। আমরা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে আলোচনার মাধ্যমে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেই। তবে শিশুটির শরীরে রক্তের মাত্রা কম থাকায় দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। আল্লাহপাকের রহমতে সফলভাবে সন্তান জন্ম নেয়। অপারেশনের মাধ্যমে ৩ কেজি ওজনের ফুটফুটে সন্তান জন্ম দিয়েছে ওই শিশু বর্তমানে মা ও নবজাতক সুস্থ রয়েছে বলেও তিনি জানান।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, সরকারিভাবে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে ওই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ আগেও তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সামনেও শিশুসহ তার মাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

ছাত্রীর চাচি অভিযোগ করেন, নবজাতক জন্ম নিয়েছে ঠিকই, তবে পরিচয় নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। পিতা-মাতা হারা শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিলো প্রতিবেশী দাদা জাহিদুল খাঁ (৫৫)। জাহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে পরিবারে। কারণ জাহিদুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে হুমকি দিচ্ছে তার স্বজনেরা। ঘটনার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের শিকার শিশুটির দাদির মামলায় জাহিদুল খাঁকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হেলেঞ্চা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে জাহিদুল কারাগারে আছেন।

পুলিশ আরও জানায়, পারিবারিক কলহের কারণে শিশুটির বাবা-মার সংসার ভেঙে যায়। পরবর্তীতে বাবা ও মা অন্যত্রে বিয়ে করে। এরপর থেকে শিশুটি তার চাচা-চাচির কাছে থাকত। এলাকার এক দুঃসম্পর্কের দাদা জাহিদুল খাঁ মাঝে মধ্য শিশুটিকে নিয়ে তার ভ্যানে বেড়াতে যেত। পরে ৭ মাস পর শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন দেখে পরিবারের মানুষ জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়নি শিশুটি। তবে প্রসব পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে গর্ভে সন্তান থাকার কথা জানতে পারে পরিবার। পরবর্তীতে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার মাধ্যমে চিকিৎসক অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি জানান। পরে শিশুটি এঘটনা তার পরিবারকে বলে। পরে গত ১৮ জুন শিশুটির দাদি বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থান হেলেঞ্চা এলাকা থেকে ধর্ষণের অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

শিশুর চাচা জানান, শিশুটির বাবা-মা দুজনেই পৃথকভাবে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ছোট থেকে শিশুটিকে তারাই লালন পালন করছেন। স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হচ্ছে।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে সব ধরণের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫