দালালের হাতে জিম্মি ইন্টারচেঞ্জের অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকরা

মির্জা শহিদুল, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২৬
উত্তরবঙ্গের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিকায়নে হাটিকুমরুল গোলচত্বরে তৈরি হচ্ছে ইন্টারচেঞ্জ। ছবি: সংগৃহীত
উত্তরবঙ্গের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিকায়নে হাটিকুমরুল গোলচত্বরে তৈরি হচ্ছে ইন্টারচেঞ্জ। এজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২-এর অধীনে এই অঞ্চলে প্রায় ১৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। এসব জমির মালিক তাদের জমির ন্যায্যমূল্য পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ ঘিরে গড়ে উঠেছে বড় একটি দালাল চক্র। আর এই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে জমির মালিকরা। এই চক্রের খবর প্রশাসন জানলেও দালালরা প্রভাবশালী হওয়ায় নিতে পারছে না কোনো ব্যবস্থা। তবে বিষয়টি তদন্ত করে চক্রের বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর মহাসড়ক বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি। সরকারের নতুন পরিকল্পনায় সড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নে ইন্টারচেঞ্জ তৈরির জন্য ইতোমধ্যেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২-এর কাজ চলমান থাকলেও এখনো অধিগ্রহণের টাকা পায়নি সিংহভাগ জমি ও ভবনের মালিক।
জমি অধিগ্রহণ ঘিরে গড়ে উঠেছে জাল দলিল তৈরির একটি দালাল চক্র। এই চক্রের সদস্যরা জমির মূল মালিক যখন ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে ৭ ধারা বা ৮ ধারা নোটিশ হাতে পায়, তখন ওই জমির ভুয়া বা জাল দলিল অথবা ভুয়া ওয়ারিশ দিয়ে অভিযোগ করেন মূল মালিকের বিরুদ্ধে। এরপর আটকে যায় মূল মালিকের পাওনা চেক। এক পর্যায়ে মূল মালিককে তার পাওনা টাকার একটি অংশ দিতে হয় এই চক্রের সদস্যদের। তবে এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে কথা বললেও কোনো প্রতিকার হয় না। জিম্মি হয়ে পড়েছে জমির মালিকরা। এখন তাদের জমিতে ইন্টারচেঞ্জের কাজ চলমান থাকায় একদিকে বন্ধ রয়েছে ফসল উৎপাদন, অন্য দিকে পাচ্ছে না ক্ষতিপূরণের টাকা।
ভুক্তভোগী জমির মালিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল হুদা বলেন, আমরা তিন ভাই বাবার সম্পত্তি সমান ভাগে ভাগ করে ও বাটোয়ারা দলিল করে নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছি। আমার মোট ৭৬ শতাংশ জমি ইন্টারচেঞ্জের অধিগ্রহণে চলে যায়। আমি ৭ ধারা ও ৮ ধারা নোটিশ পাই ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে। আমি যখন টাকা তুলতে সিরাজগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় যাই, তখন জানতে পারি ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য জমির মালিকানা দাবি করে একটি অভিযোগ দাখিল করেছে। পরে দফায় দফায় কাগজ যাচাই করে রায় দেয় আমার পক্ষেই। প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছি, এরপর আবার অভিযোগ আর অভিযোগ। আমি আমার সুবিচার চাই। উল্লাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাদিজা খাতুন বলেন, বড় একটি চক্র আছে আমরা জানি। আমাদের কাছে একই জমির দুই রকম দলিল আছে, দুই রকম লেখা। আমরা যাচাই-বাছাই করেই রায় দেই। তবে আমি মনে করি এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জল হোসেন বলেন, ভূমি অপরাধ নামে নতুন একটি আইন তৈরি হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে আমাদের ভূমি অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।