Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

নামেই, কাজে নেই জুুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ

Icon

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫০

নামেই, কাজে নেই জুুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ

জুুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ। ছবি: প্রতিনিধি

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বনভূমি সুরক্ষার জন্য ঢালু পাহাড়ে বিশেষ পদ্ধতির চাষাবাদ জুম চাষকে নিরুৎসাহিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল জুুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়ে একটি ধাপে ৪৬১ জুম চাষিকে নিরুৎসাহিত কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রণোদনা দিয়েছিল জুুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ। একবারের জন্যই যেন এই উদ্যোগ, কেননা এরপর আর কোনো কর্মসূচির আওতায় আসেননি পাহাড়ের প্রান্তিক জুম চাষিরা।

জুম গবেষকরা মনে করছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘জুুম নিয়ন্ত্রণ’ বন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। যে লক্ষ্যে এই বিভাগটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তা পূরণ করতে পারেনি। জুম নিয়ে নিজেদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম নেই বলেও স্বীকার করেছে বিভাগটি। বর্তমানে বিভাগটির মোট জনবলের এক-তৃতীয়াংশ নিয়োজিত থাকলেও জুম নিয়ে কোনো কার্যক্রম নেই প্রকল্প না থাকার অজুহাতে।

পরিবেশবাদীদের মতে, জুম চাষের ফলে পাহাড়ে একদিকে বন কমছে, অন্যদিকে পাহাড়কে ন্যাড়া করার কারণে পাহাড়ের ভূমি ক্ষয়ের পাশাপাশি জুমের ফসল তোলার পর পাহাড়ে আগুন দেওয়ার কারণে জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি হচ্ছে। এসব বিষয়কে মাথায় রেখে মূলত পাহাড়ের বন সুরক্ষায় জুমিয়াদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এ বিভাগটির প্রতিষ্ঠা।

জুুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে জুম নিয়ন্ত্রণের একটি প্রকল্পের আওতায় ৪৬১টি জুমিয়া পরিবারকে জুম আবাদের নিরুৎসাহিত করার অংশ হিসেবে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এরপর জুমিয়াদের জন্য নতুন করে কোনো উদ্যোগ বা প্রকল্প নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চলের তথ্যমতে, রাঙামাটি জেলায় ১২ হাজার ৭৯৯ হেক্টর, খাগড়াছড়ি জেলায় ১০ হাজার ৮০৩ হেক্টর এবং বান্দরবান জেলায় ১৩ হাজার ৪১৫ দশমিক ৫ হেক্টর জুম ভূমি রয়েছে। ডিএইর হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম ভূমির পরিমাণ ৩৭ হাজার ১৭ দশমিক ৫ হেক্টর।

জুুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ বলছে, জুম নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো কার্যক্রম না থাকলেও বিভাগটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুরক্ষাসহ পারমিট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিভিন্ন মৌজার অধীনে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ৬ হাজার ৩২৯ একর ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৮ হাজার ২৪৯ একর সংরক্ষিত বন রয়েছে। এছাড়া রাঙামাটির ২৯ হাজার ৮৫৩ একর ও খাগড়াছড়ির ১ হাজার ৮২৫ একর ভূমি সংরক্ষিত বন গড়ে তোলার নির্বাচিত ও অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হলে পূর্বের ২৪ হাজার ৫৭৮ একর সংরক্ষিত বনসহ মোট ৫৬ হাজার ২৫৬ একর ভূমি তাদের সংরক্ষিত বন থাকবে।

বন সংরক্ষক রাঙামাটি অঞ্চল দপ্তর সূত্র জানায়, জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন আটটি রেঞ্জ কার্যালয় রয়েছে। রেঞ্জসমূহ হলো- বীজ ও বীজতলা রেঞ্জ, ফুলগাজী রেঞ্জ, খাসখালী (কাঁশখালী) রেঞ্জ, উল্টাছড়ি রেঞ্জ, হাজাছড়ি রেঞ্জ, মেরুং রেঞ্জ, তিনকুনিয়া রেঞ্জ ও কুতুবদিয়া রেঞ্জ। রেঞ্জসমূহের সেবাদান ও কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে চারা বিক্রয় ও বিতরণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা; বন ও বনায়ন এবং বনজ সম্পদের ক্ষতি না করার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান, বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধকরণ; অংশীদারত্বের মাধ্যমে বনায়ন কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা, গণশুনানি, জোতপারমিট সংক্রান্ত কার্যক্রমে পারমিটকারীদের সহযোগিতা প্রদান। আবার জুুম নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আটটি রেঞ্জ আওতাধীন বিভিন্ন পদে ২২৯টি জনবল পদ রয়েছে; এর মধ্যে ৭৯ নিয়োজিত আছেন। 

জুম চাষ নিয়ে কোনো কার্যক্রম নেই- বিষয়টি স্বীকার করেই জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. জাহিদুর রহমান মিয়া বলেন, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে এক বারই ৪৬১ জনটি জুমিয়া প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। এরপর প্রকল্পটি আর কন্টিনিউ হয়নি। বাস্তব কথা হলো এখন দৃশ্যত আমাদের জুম নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যক্রম নেই। তবে আমরা বন রক্ষায় জুম নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। পার্বত্য জেলায় কী পরিমাণ জুম ভূমি রয়েছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী পরিমাণ জুম ভূমি রয়েছে; এর সঠিক তথ্য আমাদের বিভাগের কাছে নেই। তবে ডাটাবেস তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫