Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

কেএনএফ-শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বৈঠক

Icon

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৪৭

কেএনএফ-শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বৈঠক

বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফের সদস্যরা। ছবি: বান্দরবান প্রতিনিধি

পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের জেরে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠা হওয়া ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফের’ মধ্যে দুইবার ভার্চুয়াল সংলাপের পর  প্রথমবারের মত সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রবিবার (৫ নভেম্বর) সকাল দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রুমা উপজেলার সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুনলাই পাড়া কমিউনিটি সেন্টারে শান্তি প্রতিষ্ঠার কমিটির সাথে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রথমবারের মত সরাসরি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’ মুখপাত্র ও বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা।

বৈঠক শেষে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ক্য শৈ হ্লা মারমা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে দুপক্ষই অত্যন্ত সুন্দর ও আন্তরিকভাবে আলোচনা করতে পেরেছি। বাদবাকী বিষয় ডিসেম্বররে মাঝামাঝিতে সরাসরি দ্বিতীয়বার বৈঠকে আলোচনা করা হবে।

প্রথমবারের মত সরাসরি বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা রবিবার বিকালে সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, আড়াই ঘন্টাব্যাপী সরাসরি এই বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফর মধ্যে অত্যন্ত ভালো ও সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তাদের উত্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো আমরা শুনেছি। আমাদের কিছু অনুরোধ উনারা রেখেছেন। উভয় পক্ষের সম্মতিতে চলমান শান্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। আমাদের উভয় পক্ষের সম্মতিতে একটা সমঝোতা স্মারকে উপনীত হয়েছি।

‘‘কেএনফের ছয় দফার বাইরে তাদের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা এসেছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে তাদের মূল ছয় দফার দাবি নিয়ে আমাদের পক্ষে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে তাদের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আগামী ডিসেম্বরে আবারও সরাসরি বৈঠক হবে।’’

বৈঠকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ক্য শৈ হ্লা মারমা নেতৃত্বে অংশ নেওয়া অন্য সদস্যরা হলেন কমিটির মুখপাত্র ও জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা, বম স্যোসাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজারলম বম এবং সাধারণ সম্পাদক লালথাং জেল বম, কৃপা ত্রিপুরা, খুমী সোস্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা লেলুং খুমী, অ্যাডভোকেট বাসিংথুয়াই মারমা এবং সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু।

অপর দিকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বমের প্রধান উপদেষ্টা লাল ঙেন লিয়ান বমের নেতৃত্বে কেএনফের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্য অংশ নেন। এছাড়া সরাসরি বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিধিরাও ছিলেন বলে জানিয়েছেন শান্তি প্রতিষ্ঠার কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা।

২০২২ সালের শুরুর দিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠনের কথা সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়। বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, খুমি ও ম্রোদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও সেখানে বম জনোগষ্ঠীর কিছু সংখ্যক লোকজন রয়েছে। যার কারণে সংগঠনটি পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়।

কেএনএফের ফেইসবুক পেইজে তারা জানায়, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাইছড়ি বিলাইছড়ি ও বান্দরবান জেলার  রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ নয়টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ হিসেবে গঠন করা হবে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তারা। আইনশৃঙ্খা বাহিনীর অভিযানে আতঙ্কে সেই সময় ভারতের মিজোরামে পালিয়ে আশ্রয় নেয় পাঁচ শতাধিক বম নারী-পুরুষ।

স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ৩০ মে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধি নিয়ে তৈরি করা হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। পরে জুন মাসে শেষ সপ্তাহে জেলা পরিষদের সভা কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির গঠন ও উদ্দেশ্য।

১৮ সদস্যের এই শান্তি প্রতিষ্ঠার কমিটি আহবায়ক হিসাবে রয়েছেন বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগরে সভাপতি ক্য শৈ হ্লা মারমা এবং সদস্য সচিব হিসাবে রয়েছে বম সোস্যাল কাউন্সিলে সভাপতি লালজারলম বম। জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যাকে কমিটির মুখপাত্র হিসাবে রাখা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বান্দরবান জেলায় কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ); যা ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত এই সশস্ত্র সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে গত বছর অক্টোবর মাসে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে জানায় র‌্যাব।

এরপর গত বছর ১৭ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভিযান চালায় র‌্যাব ও সেনা সদস্যের যৌথ বাহিনী। পরবর্তীতে এ অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও। ইতিমধ্যে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হয়েছে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সদস্যও। সংঘাতে প্রাণ গেছে কেএএনএফ সদস্যেরও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারনে কয়েক দফা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশী-বিদেশী পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে পর্যায়ক্রমে তিন উপজেলা থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা নেওয়া হলেও রোয়াংছড়ি উপজেলায় দেশী-বিদেশী পর্যটক ভ্রমণে এখনও নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫