কেউ নির্বাচনে আসতে চাইলে কমিশন নতুন সিদ্ধান্ত নেবে: ইসি হাবিব

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৩

বক্তব্য রাখছেন ইসি মো. আহসান হাবিব খান। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, আমরা চাই সব দল নির্বাচনে আসুক। এখনো যদি কেউ নির্বাচনে আসতে চায় তবে কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দাওয়াত দিয়েছি। আগে আপনারা নির্বাচনে আসুন, তার পরে বলুন নির্বাচন কেমন হয়েছে।
আজ রবিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এসময় নির্বাচনকালিন মাঠ প্রশাসনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে মাঠ প্রশাসন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারা সকলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও আশ্বস্ত করেছেন। সকলে তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করবে। দায়িত্ব পালনে ব্যত্যয় ঘটলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। আর একজন ভোটার যাতে ভোট কেন্দ্রে এসে সুষ্ঠুভাবে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আবার নির্বিঘ্নে বাসায় ফিরে যেতে পারে তার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের।
সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, সেনা মোতায়েন প্রত্যেকটা নির্বাচনেই হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
এসময় নির্বাচন কমিশনার বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সারা দেশের মানুষ রাজনৈতিকদলসহ সবার চাওয়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আর সাংবিধানিকভাবে এই গুরু দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত।
তিনি বলেন, আমরা শপথ নেওয়ার পর থেকে একমাত্র লক্ষ্য একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার। এক্ষেত্রে পূর্বের সকল নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে।
এর আগে রবিবার সকাল ১০টায় বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের আয়োজনে বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বরিশালসহ তিনটি জেলার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা, আঞ্চলিক ও জেলা এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আনসার বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনারা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা সকলে যেন তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ নিরপেক্ষ হয়ে পালন করে। কখনও দলীয় মনোভাব পোষণ করা যাবে না বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না। দায়িত্ব পালনে প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কখনও অতি উৎসাহী হয়ে এমন কোন আচরণ করবেন না যাতে আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যদি পূর্ব থেকেই ফৌজদারী বা ক্রিমিনাল মামলা থাকে সেটি ভিন্নভাবে আদালতে স্বাভাবিক গতিতে চলবে। এছাড়া আগুন সন্ত্রাস, ভোটের কার্যক্রমে বাধা ও অন্যান্য ক্রিমিনাল কার্যক্রমের জন্য আইন তার নিজের গতিতে চলবে। কিন্তু অযথা নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে স্বচ্ছ মনোভাব দেখাতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী বা নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কোন প্রার্থীর বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বিষয়টিতে অবশ্যই গুরুত্ব দিবেন। এখানে কোন প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সময়ে নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। এ বিষয়ে অধিকতর সর্তক থাকতে হবে। ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। আমরা চাই না নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওইসব জায়গায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক। সে জন্য আপনারা পূর্ব প্রস্তুতি নেবেন।
নির্বাচনে গণমাধ্যম কর্মীদের দায়িত্বপালনে সকলের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নীতিমালা অনুসরণ করে খবর সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যম কর্মীরা সারা দেশব্যাপী কর্মরত থাকেন। তারা নির্বাচনী এলাকার এবং বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহ করে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করেন। তাদের কাজে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত করবেন। নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে, সেটাই গণমাধ্যমকর্মীরা তুলে ধরবে সারা দেশের মানুষের কাছে। মনে রাখতে হবে গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের কাজে অযৌক্তিক বাধাপ্রাপ্ত হলে বিভিন্ন মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় অনেক প্রভাবশালী মহল বা রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক/বর্তমান মন্ত্রী-এমপিসহ নানা মানুষ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচনের সময় অনেকে পেশিশক্তি, অর্থশক্তি বা ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করে। কালো টাকার ব্যবহারের কথাও শোনা যায়। আপনারা চোখ কান খোলা রেখে এই বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করবেন। তবে বিনয়ের সাথে ব্যবহার কিন্তু সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে কখনোই সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। আমরা চাই প্রশাসন ক্যাডার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান থাকুক এবং একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করুক। এতে নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর থাকবে। প্রার্থী, ভোটার রাজনৈতিক দল, পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে সব মহল আপনাদের তথা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
এসময় পোলিং এজেন্টদের হয়রানী না করা এবং সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের শৈথিল্য না দেখানোর বিষয়ে সতর্ক করেন।