Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

সীমান্তে ‘ডাঙ্গোয়াল’ আতঙ্কে রাত জেগে ফসল পাহারা

Icon

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫৩

সীমান্তে ‘ডাঙ্গোয়াল’ আতঙ্কে রাত জেগে ফসল পাহারা

ডাঙ্গোয়াল আতঙ্কে রাত জেগে ফসলের ক্ষেত পাহারা। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

গরু চোরাকারবারি ‘ডাঙ্গোয়াল’ আতঙ্কে রাত জেগে ফসলের ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন লালমনিরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার কৃষকরা। ডাঙ্গোয়ালরা প্রতি রাতে ভারত থেকে আনা গরু সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কৃষকদের ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে রাত জেগে দল বেঁধে পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, ডাঙ্গোয়ালদের কারণে এখন ভুট্টা, তামাক, বোরো ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একমাস আগে আমন ধান খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শীতকালে ঘনকুয়াশা নামলে ডাঙ্গোয়ালরা বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারণে সীমান্ত এলাকার জমি থেকে তারা আশানুরূপ ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। সীমান্তে ডাঙ্গোয়ালরা সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হয়। বিজিবি তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থাও নিচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূর্গাপুর সীমান্তে ডাঙ্গোয়াল সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানান, শুধু দূর্গাপুর সীমান্ত নয়, লালমনিরহাট জেলার প্রায় ২২টি সীমান্তরুটে প্রতি রাতে ভারতীয় গরু পাচার হচ্ছে। ভারতীয় গরু পাচার করার সময় বিএসএফের ভয়ে কোনটি ফসলের ক্ষেত আর কোনটি সড়ক সেটা তাদের খেয়াল থাকে না।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ডাঙ্গোয়ালরা গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ভারতীয় গরু বাংলাদেশে পাচার করে নিয়ে আসছে। তারা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতীয় গরুগুলো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যায়। তারা সড়ক পথ ব্যবহার না করে ফসলের ক্ষেত দিয়ে এসব গরু পাচার করেন। এতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষকরা সীমান্ত এলাকায় ধান, সবজি, ভুট্টা ও তামাকের চাষ করেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারণে সীমান্ত এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শীতকালে ডাঙ্গোয়ালদের আতঙ্কে থাকতে হয় সীমান্ত এলাকার কৃষকদের। তাই ডাঙ্গোয়ালদের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য রাত জেগে খেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা। এ ব্যাপারে কৃষকরা বিজিবির কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।


ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ডাঙ্গোয়ালরা ভারতীয় গরু পাচারের কারণে গেল এক সপ্তাহে তার এক বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। গভীর রাতে ডাঙ্গোয়ালরা ভারতীয় গরু নিয়ে ফসলের ক্ষেত দিয়ে গন্তব্যে চলে যায়। সীমান্তে আমার আরো ৫ বিঘা জমির ফসল নিয়ে চিন্তিত রয়েছি। তাই রাতে এসে ফসলের ক্ষেত পাহারা দিতে হচ্ছে।

অপর কৃষক রমজান আলী জানান, তিনি সীমান্তে দুই বিঘা জমিতে তামাকচাষ করেছেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারণে প্রায় এক বিঘা জমির ফসল প্রায় নষ্ট হয়েছে। বাকি এক বিঘা জমির ফসল নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারণে তাদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা বিজিবির কাছে অভিযোগ করেছেন, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। 

দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মেহেরুল ইসলাম জানান, তিনি ডাঙ্গোয়ালকে ফসলের ক্ষেত দিয়ে গরু আনতে নিষেধ করেছেন কিন্তু তারা শুনছে না। বিজিবি ক্যাম্পেও বিষয়টি  অবহিত করা হয়েছে। তবে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রতিকার ব্যবস্থা নিতে কৃষকদের আশ্বস্ত করেছেন।

লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দূর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার মশিউর রহমান জানান, কৃষকরা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন। জনবল সঙ্কট থাকায় সবসময় সবদিকে টহল ব্যবস্থা জোরদার সম্ভব হচ্ছে না। ডাঙ্গোয়ালরা খুবই সাহসী ও চালাক-চতুর। বিজিবির নজরদারি ফাঁকি দিয়ে তারা ভারতীয় গরু পাচার করেন। কৃষকদের ফসল যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য চিহ্নিত রুটগুলোতে টহল ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হবে বলেও তিনি জানান।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫