অভিযোগের শেষ নেই নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে

নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:২৪

কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান। ছবি: নড়াইল প্রতিনিধি
অভিযোগের শেষ নেই নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে। এরই ধারাবাহিতকায় শিল্পী, বিচারকসহ ৪১ জনের সম্মানী ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে জানা যায়, শিল্পীদের সম্মানী ও যাতায়াত ভাড়া, বিচারকদের টাকা ঠিক মতো না দেওয়া এবং শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে অভিযোগ করেছেন। দুর্নীতি অনিয়মের তদন্তপূর্বক জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অপসারণ দাবি করে স্মারকলিপি দিয়েছেন জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার পদে যোগদানের পর থেকেই হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ ডিসেম্বর গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পী, কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্টদের এখনও পর্যন্ত কোনো সম্মানী দেওয়া হয়নি। অথচ এ অনুষ্ঠানের টাকা আগেই বরাদ্দ হয়েছে।
এ সাংস্কৃতিক উৎসবের ব্যয় হিসেবে গত ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেখা গেছে, পাঁচটি সংগীত সংগঠন, তিনটি নৃত্য সংগঠন ও দুটি আবৃত্তি সংগঠনের সম্মানী হিসেবে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। পাঁচজন যন্ত্রশিল্পীকে চার হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, একক সংগীত শিল্পী (সিনিয়র) পাঁচজনকে ১৫ হাজার টাকা, একক সংগীত শিল্পী (জুনিয়র) পাঁচজনকে ১০ হাজার টাকা, একক নৃত্য শিল্পী তিনজনকে ছয় হাজার টাকা, আবৃত্তিতে তিনজনকে ছয় হাজার টাকা, একক আবৃত্তি শিল্পী দুজনকে চার হাজার টাকা এবং উপস্থাপকের সম্মানী হিসেবে চার হাজার টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া ব্যানার, সাজসজ্জা, ডকুমেন্টেশন, প্রচার ও উৎসব সমন্বয়কারীর সম্মানী হিসেবে আরো ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আছে। কিন্তু বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও যন্ত্রশিল্পী, উপস্থাপকসহ মোট ৪১জনের কাউকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পকলা একাডেমির একাধিক শিক্ষক এবং শিল্পী অভিযোগ করেন, ১০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে অনুষ্ঠান পরিবেশন করার কথা থাকলেও জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান নিজের ইচ্ছেমতো শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি শিল্পীদের সাতটি গ্রুপে বিভক্ত করে এবং বাইরে থেকে তিনটি সংগঠন এনে অনুষ্ঠান করালেও কাউকে সম্মানী দেননি।
এ ব্যাপারে সংগীত শিল্পী পূর্বা সোম, পিংকী সাহা, পমা সোম, অথই সোম, মেঘা সোমসহ একাধিক শিল্পী জানান, অনুষ্ঠান বাবদ তাদের কোনো সম্মানী দেওয়া হয়নি।
‘আশামনি সংগীত একাডেমি’র প্রতিষ্ঠাতা কবি আশামনি বলেন, আমাদের শিল্পীরা অনুষ্ঠান করলেও কালচারাল অফিসার এখনো কোনো সম্মানী দেননি।
এদিকে গত ৫ জুন জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল দুই লাখ টাকা। এ অনুষ্ঠানে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও একক অভিনয়ে ২১ জন বিচারক রাখার কথা থাকলেও রাখা হয় মাত্র ১০জন। প্রত্যেকের তিন হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র এক হাজার টাকা করে।
এছাড়া জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কার কাজ হলেও সাউন্ড এবং ইলেকট্রিকের কাজ খাতা-কলমে টেন্ডার দেখিয়ে মূলত নিজেই সেই কাজ করেছেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাউন্ড এবং ইলেকট্রনিক্স ও ডেকোরেশন ব্যবসায়ী জানান, তারা অডিটোরিয়ামের কাজ না করলেও তাদের কাছ থেকে জেলা কালচারাল অফিসার ফাঁকা ভাউচার নিয়ে গেছেন।
শিল্পকলা একাডেমির সাবেক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল শেখ বলেন, গত জুলাই মাসে নড়াইলে চাকরি করাকালীন সময়ে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার কাছ থেকে ছয়টি কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে রাখেন। এরপর আগস্ট মাসে আমাকে পথের কাঁটা ভেবে মেহেরপুরে বদলি করেন।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু বলেন, গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে ১০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে নড়াইলের উল্লেখযোগ্য কোনো সংগঠনকে অবহিত করেননি জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান। এছাড়া শিল্পী ও কলাকুশলীসহ ৪১ জনের কাউকে কোনো সম্মানী দেননি। কালচারাল অফিসার একের পর এক বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। আমরা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তপূর্বক অপসারণ দাবি করছি।
এদিকে প্রায় দেড় বছর আগে ময়মনসিংহ জেলা কালচারাল অফিসার হিসেবে কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির কারণে হামিদুর রহমানকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় বদলি করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তবে, গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে নড়াইলের ১০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীলকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।