আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ৩৫ জন প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের হাতে নির্বাচনী প্রতীক তুলে দেন জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।

প্রতীক পাওয়ার পরপরই প্রচার প্রচারণায় নেমে পড়েছেন প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। এরপরই নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে গোটা বরিশাল। বিকেল থেকে শুরু হয়েছে ভোট চেয়ে মাইকিং। তবে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে দলীয় এবং স্বতন্ত্রসহ সাতজন প্রার্থী থাকলেও প্রতীক পাওয়ার পর শুধুমাত্র নৌকার পক্ষে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার লাগাতে দেখা গেছে। বিকেল থেকে মাইকের মাধ্যমে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রচার-প্রচারণা এবং কর্মীরা নগরীর বিভিন্ন জনপদে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেন।

প্রথম দিনে অন্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা না থাকায় বরিশাল সদরে নির্বাচনের আমেজ নেই নগরবাসীর মধ্যে। যদিও সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনের ‘ট্রাক’ প্রতীকের পক্ষে ভোট মিছিল করতে দেখা যায় তার সমর্থকদের। তাছাড়া মঙ্গবার থেকে অন্য প্রার্থীরাও প্রচার প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন প্রার্থীদের সমর্থকরা।

অপরদিকে, উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থীতা ফিরে পেলেও প্রতীক বরাদ্দ পাননি সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এ কারণে তিনি বা তার কর্মীরাও প্রচারণায় নামেননি। সাদিক আবদুল্লার আইনজীবী ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে। তাই উচ্চাদালতের সার্টিফায়েড কপি পেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। প্রতীক পেয়েই আমাদের প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় নামবেন।

জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আটজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। যারা সবাই স্থানীয়ভাবে যাচাই-বাছাইতে বৈধতা পেয়েছেন।

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে পাল্টাপাল্টি আপিল করা হয়।

এর মধ্যে জাহিদ ফারুক শামীমের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করা হলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বাতিল করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লার মনোনয়ন। তবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে প্রার্থীতা ফিরে পান সাদিক আবদুল্লাহ।

অপরদিকে, দলীয় প্রার্থিদের মধ্যে থেকে একমাত্র জাকের পার্টির প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে আসনটিতে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠের লড়াইয়ে টিকে যান সবমিলিয়ে সাতজন।

এদিকে, জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের দলীয় এবং স্বতন্ত্র ৩৫ জন প্রার্থির মাঝে সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রতীক তুলে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। বিভিন্ন জোট ও দলের প্রার্থিরা পেয়েছেন নির্ধারিত প্রতীক।

আর স্বতন্ত্র প্রার্থিরা পেয়েছেন তাদের পছন্দের প্রতীক। তবে বরিশাল-৬ আসনে ঈগল প্রতীক পেতে আগ্রহী ছিলেন একাধিক প্রার্থী। ফলে তিনজনের মধ্যে লাটারি করে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির ছেরনিয়াবাত সেকেন্দার আলী ‘লাঙ্গল’ ও ন্যাশনাল পিপ্লস পার্টি- এনপিপির মো. তুহিন পেয়েছেন ‘আম’ প্রতীক। এই আসনে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তাই নৌকার প্রতিপক্ষ হচ্ছে জাতীয় পার্টি ও এনপিপি।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে ১৪ দলের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন পেয়েছেন ‘নৌকা’ প্রতীক। এছাড়া তৃণমূল বিএনপির মো. শাহজাহান সিরাজ সোনালী ‘আঁশ’, আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী যথাক্রমে সাবেক সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম মনি ‘ঢেকি’ এবং একে ফাইয়াজুল হক রাজু ‘ঈগল’ প্রতীক পেয়েছেন।

এছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী কন্ঠ শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস ‘গামছা’, জাতীয় পার্টির মো. ইকবাল হোসেন তাপস ‘লাঙ্গল’ এবং ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) সাহেব আলী পেয়েছেন ‘আম’ প্রতীক।

বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু ‘লাঙ্গল’, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ মো. টিপু সুলতান ‘হাতুরী’, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আজমুল হাসান জিহাদ ‘ছড়ি’, তৃণমূল বিএনপির মো. শাহনাজ হোসেন ‘সোনালী আঁশ’ এবং আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী যথাক্রমে মো. আতিকুর রহমান আতিক ‘ট্রাক’ ও মো. আমিনুল হক পেয়েছেন ‘ঈগল’ প্রতীক।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে। এ কারণে আসনটিতে নেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে গেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তিনি নির্বাচনী প্রতীক পেয়েছেন ‘ঈগল’। এছাড়া জাতীয় পার্টির মো. মিজানুর রহমান ‘লাঙ্গল’ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম চুন্নু পেয়েছেন ‘ছড়ি’ প্রতীক।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন ‘লাঙ্গল’, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) আবদুল হান্নান সিকদার ‘আম’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহাতাব হোসেন ‘ডাব’, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আসাদুজ্জামান ‘ছড়ি’ এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মো. সালাহ উদ্দিন রিপন পেয়েছেন ‘ট্রাক’ প্রতীক। উচ্চ আদালতে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পেলেও আদেশের কপি না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের আবদুল হাফিজ মল্লিক ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রতনা ‘লাঙ্গল’, জাসদের মোহাম্মদ মোহসীন ‘মশাল’, তৃণমূল বিএনপি’র টিএম জহিরুল হক তুহিন ‘সোনালী আঁশ’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. মাইনুল ইসলাম ‘ডাব’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. মোশারফ হোসেন ‘আম’ এবং আওয়ামী লীগের ৪ বিদ্রোহী যথাক্রমে মোহাম্মদ শামসুল আলম ‘ট্রাক’, মো. কামরুল ইসলাম খান ‘তরমুজ’, মো. জাকির খান সাগর ‘রকেট’, মো. শাহাবাজ মিঞা পেয়েছেন ‘ঈগল’ প্রতীক।

এই আসনে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের সময় তিনজন প্রার্থী ‘ঈগল’ প্রতীক দাবি করেন। যে কারণে লটারির মাধ্যমে শাহাবাজ মিঞাকে ‘ঈগল’ প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

বরিশাল জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বরিশালের ৬টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৩৫ জনের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে তারা বিধি মেনে প্রচারণা চালাতে পারবেন। কেউ প্রচারণায় আইনের ব্যতয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।