প্রচারণার শুরুতেই সংঘর্ষ-বাধা উৎসবমূখর নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করবে

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:০২

মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের নির্বাচনী অফিসে হামলা-ভাংচুর | ছবি : সাম্প্রতিক দেশকাল
ভোটের প্রচারণার শুরুতেই ঝিনাইদহ বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার টানতে অবাধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রতীক পাওয়ার পর প্রচারণার শুরুতেই আওয়ামী লীগের মনোনীত ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ-উত্তেজনা শুরু হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের দায়ী করেছেন।
ঝিনাইদহ-১ আসনের শৈলকুপায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলালের পোস্টার লাগানোর সময় তার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা। এতে আল-আমিন, সুজন ও কুদ্দুস শেখ নামের তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ-১ আসনে শৈলকুপার ত্রিবেণী ইউনিয়নের মদনডাঙ্গা বাজারে ও মনোহরপুর ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দুধসর ইউনিয়নের ভাটই বাজারে ও মির্জাপুর ইউনিয়নের আলমডাঙ্গা বাজারে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী দুলালের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন এবং বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন।
অপরদিকে ঝিনাইদহ-২ আসনের ঝিনাইদহের সদর উপজেলার বাদপুকুর গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের পোস্টার টাঙানোকে কেন্দ্র করে নারী ইউপি সদস্যকে মারপিট ও পোস্টারে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলার শাখারীদহ বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে প্রতিপক্ষ নৌকার সমর্থকরা এ হামলা চালায় বলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিনিধি কামরুল জোয়ারদার অভিযোগ করেন।
হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় একজনকে আটকও করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তির পরিচয় পুুলিশ জানায়নি।
ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিন উদ্দীন বলেন, বাদপুকুর গ্রামে মহিলা ইউপি সদস্যকে মারধর বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার ছেঁড়া বা পোড়ানো হয়েছে এমন কোনো সংবাদ এখনও পর্যন্ত পাইনি। তবে এমন কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন মন্তব্য করে দলীয় প্রার্থীদের সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাশ করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। কারণ নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে।
এদিকে ইসি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই দলগুলোর কোনোটিই আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার সামর্থ্য রাখে না। তবে এবারে নির্বাচনের নতুনত্ব হচ্ছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্তত ১২৭টি আসনে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজ দলের নৌকার প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন। বিভিন্ন দলের সাথে আসন ভাগাভাগীর কারণে প্রায় সব আসনেই মূল লড়াইটা হবে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথেই।
এই অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ করা হলে নির্বাচন উৎসবমূখর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার উদ্যোগ ব্যহত হবে। স্থানীয়রা বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করা হলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যেতে নিরুৎসাহিত হবে। এতে নির্বাচন উৎসবমূখর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে কেউ অন্যায়ভাবে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করলে তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীই নির্বাচন কমিশনের কাছে সমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব প্রার্থীকে নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মেনে প্রচার চালাতে হবে। কেউ আইন ও বিধি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি। তবে বিষয়টি কথার কথায় সিমাবদ্ধ না থাকে সেবিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার দাবী সংশ্লিষ্টদের।
শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের জন্য প্রশাসনকে যেকোন ধরনের সহিংস ঘটনাসহ সকল ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান স্থানীয়রা।