টিকিট কারসাজি দিয়ে শুরু হলো কক্সবাজার এক্সপ্রেস

তাহজীবুল আনাম
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:৩২

কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ রেলের টিকিট সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তদবির বা বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়া এই টিকিট পাওয়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্টেশন বা অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না। অনলাইনে ছাড়ার মাত্র ১-৩ মিনিটের মধ্যেই ৭-৮শ টিকিট হাওয়া হয়ে যায়। তবে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা দিলেই একটি চক্রের মাধ্যমে পাওয়া যায় টিকিট, এমনই অভিযোগ সাধারণ মানুষের।
কক্সবাজারের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল এই রেল স্টেশন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রেল চালু হলেও ট্রেনে সহজে চলাচল করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। কালোবাজারির দখলে চলে গেছে রেলের টিকিট। স্টেশনের আশপাশে অনেক অসাধু ব্যক্তি টিকিটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করার তথ্যও রয়েছে।
ঝিলংজার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, গত ৮ ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকিট দরকার ছিল। প্রথমে অনলাইনে না পেয়ে স্টেশনে সরাসরি দুবার গিয়েও টিকিট পাইনি। কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন ছিল এই রেল। দীর্ঘকাল পর কক্সবাজারে রেল চলাচল শুরু হলেও আমাদের মতো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে টিকিট।
লিংকরোডের ফয়সাল উদ্দিন বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে টিকিট পাওয়া যায় না। তবে অতিরিক্ত ২০০-৩০০ টাকা দিলে স্টেশনের বাইরে থেকে রেলের টিকিট কিনতে পাওয়া যায় বলে শুনেছি।
শহরের লাইট হাউসের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, রেল স্টেশনের কেউ এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। নিমিষে ৭০০-৮০০ টিকিট বুকিং হয়ে যাওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে পারে না।
অনেক পর্যটক কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাওয়ার রেলের টিকিট কিনতে গিয়েও পাচ্ছেন না। সমির নামের এক পর্যটক বলেন, কক্সবাজার ভ্রমণে যখন আসব, ভেবেছিলাম নতুন রেল চালু হয়েছে তাই ট্রেনে যাব। দুঃখের বিষয় হচ্ছে রেল স্টেশনে ৩ বার গিয়েও ১৫ তারিখের টিকিট কিনতে পারিনি। পরে বাসে কক্সবাজার আসতে হয়েছে।
ঢাকার এক সাংবাদিক জানান, দীর্ঘদিন পরিবার পরিজন নিয়ে কক্সবাজার যাওয়া হয় না, তাই কক্সবাজার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এবার যেহেতু নতুন রেল সংযুক্ত হয়েছে, তাই কক্সবাজার থেকে ঢাকা ফেরার সময় ট্রেনে করে আসার আগ্রহ ছিল। সাধারণত ১০ দিন আগে রেলের টিকিট অগ্রিম কিনে রাখতে হয়, তাই আমিও অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে কক্সবাজার ও কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে টিকিটের খোঁজ করি। কিন্তু কোনো টিকিট পাওয়া যায়নি। এরপর নিরুপায় হয়ে এক মন্ত্রীর ভাগ্নের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার মাধ্যমে তিনটি টিকিটের ব্যবস্থা হয়। বোঝা যাচ্ছে, ক্ষমতা আর উপর মহলে যোগাযোগ ছাড়া রেলের টিকিট সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে ট্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু ট্রেন চালুর পর থেকে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, টিকিট কালোবাজারে চলে যাচ্ছে, স্বাভাবিক উপায়ে টিকিট মিলছে না। সিংহভাগ রেলের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। আর অতিরিক্ত ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দেওয়া হলেই মিলছে টিকিট। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির পর স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ১৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এর বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা মামলা করেন। মামলায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে কক্সবাজারের ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি হচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট এসব টিকিট বাগিয়ে নেওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন, যা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৯০ (১) (সি) ধারায় আমলে নেওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যার নজরে আসে। এটি ১৯৭৪-এর ২৫ ধারায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে মর্মে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় তদন্ত জরুরি।
কক্সবাজারে অবস্থিত আইকনিক রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট কোথায় যাচ্ছে, কোনো সিন্ডিকেটের কবলে কালোবাজারি হচ্ছে কিনা, এ ঘটনায় কারা জড়িত এসব তদন্ত করতে র্যাবকে (১৫) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য র্যাব সদর দপ্তরে নথিপত্র পাঠানো হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে র্যাব। কয়েক মিনিটের মধ্যে টিকিট শেষ হওয়ার খবরটি আসলেই সন্দেহজনক বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।