
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড় কর্তনকারীরা। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড় কর্তনকারীরা। প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে বিকাশ বিল্ডিং এলাকায় অভিযানের ৯ ঘণ্টার মধ্যেই জব্দ করে জিম্মায় দেয়া এস্কেভেটর ছিনিয়ে নিয়েছে একদল অস্ত্রধারী পাহাড় কর্তনকারী।
অপরদিকে সকালে সৈকতপাড়া এলাকায় সীলগালা ভেঙ্গে এবং শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকায় ফের নির্মাণ কাজ শুরু করে সংঘবদ্ধ পাহাড় কর্তনকারীরা। তারা প্রশাসনের আদেশ থোড়াই কেয়ার করছেন। এতে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের বিকাশ বিল্ডিং এলাকা এবং আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে সৈকতপাড়া ও বাদশাঘোনা এলাকায় এসব অনিয়ম চলছে। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদীরা।
এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার সকালে কলাতলী বাইপাস সড়কের বিকাশ বিল্ডিং এলাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউনুসকে মারধর এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে প্রশাসনের জব্দ করে জিম্মায় দেয়া এস্কেভেটর ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল অস্ত্রধারী। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে সহযোগিতা চান ওই ইউপি সদস্য। কিন্তু পুলিশ পৌঁছার আগেই তারা এস্কেভেটর নিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার পর ইউনুস কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ঘটনা ইউএনও-এসি ল্যান্ডকে অবগত করেছেন।
এরপরই সকালে সৈকতপাড়া এলাকায় ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অফ কক্সবাজারের (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা পল্লবের পাহাড় কাটার স্থানে সীলগালা ভেঙ্গে এবং শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকায় মাঙাই বম প্রকাশ মেঘা’র পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন স্থাপনার কাজ পুনরায় শুরু করা হয়।
সৈকতপাড়া এলাকার আবু তাহের বলেন, নুরুল কবির পাশা পল্লব প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার সাথে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। এই প্রভাব বিস্তার করেই তিনি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে এস্কেভেটর দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছিলেন। অভিযানের একদিন পার না হতেই সেখানে সীলগালা ভেঙ্গে আবারও কার্যক্রম চালাচ্ছে পল্লব।
বাদশাঘোনা এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, মেঘা নামের ওই মহিলা খুবই প্রভাবশালী। তিনি তিন মাস ধরে নৌবাহিনীর সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে সরকারি পাহাড় কেটে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করলেও কেউ বাধা দেয়নি। গেল সোমবার অভিযান চালিয়ে কাজ বন্ধ করলেও একদিন না যেতেই আবারও কাজ শুরু করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, ঘটনা তিনটি আমি শুনেছি। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গেল সোমবার দুপুরের পর থেকে বিকাল পর্যন্ত পাহাড় কাটার পৃথক ৪টি স্থানে অভিযান চালায় কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসন। এসময় সৈকতপাড়া এলাকায় নুরুল কবির পাশা পল্লবের পাহাড় কাটা বন্ধ করে সরঞ্জাম জব্দ, সীলগালা, বাদশাঘোনা এলাকায় মেঘা’র পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন স্থাপনার কাজ বন্ধ, বাইপাস সড়কের বিকাশ বিল্ডিং এলাকায় নুরুল আমিন মুন্নার পাহাড় কাটার স্থানে এস্কেভেটর জব্দ এবং মোহাম্মদ ইলিয়াছের স্থান পরিদর্শন করা হয়।
অভিযানে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।