রঙিন ফুলকপি। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি
পাবনায় প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি আবাদ করে সারা ফেলেছেন কৃষক আসলাম আলী। ইউটিউব দেখে রঙিন এই কপি চাষের প্রতি আগ্রহী হন আসলাম। প্রথমে সবাই নানা রকম সমালোচনা করলেও এখন তার ক্ষেতের হলুদ আর বেগুনি রঙের বিদেশি জাতের কপি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছে মানুষ। বাজারে নতুন জাতের রঙিন কপির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে সাধারণ ফুলকপির তুলনায় বাজারে এই রঙিন কপি বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। এতে প্রথমবার চাষেই ভালো লাভের আশা করছেন কৃষক আসলাম ও তার পরিবার। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক আসলাম। তার এই সফলতা দেখে রঙিন কপি চাষে আগ্রহী হচ্ছে বহু কৃষক। প্রতি বছর দুই বিঘা জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করতেন পাবনার বিলভিদুরিয়া গ্রামের সাধারণ কৃষক আসলাম আলী। তবে পরিবারের উৎসাহে নিয়মমাফিক সবজি আবাদের বদলে রঙিন ফুলকপি আবাদে আগ্রহী হন তিনি।
আসলাম আলী বলেন, প্রথমে এই জাতের রঙিন কপি ইউটিউবে দেখে আমার দুই মেয়ে। তাদের আগ্রহের কারণেই রঙিন কপি চাষের সিদ্ধান্ত নেই। কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে এবার বেশিরভাগ জমিতে নতুন জাতের রঙিন ফুলকপি আবাদ শুরু করি। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা না পেয়ে ঢাকা থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে নিয়ে আসি ভেলেনটিনা ও কেরটিনা জাতের রঙিন কপির বীজ। ২ বিঘা জমিতে রোপণ করেন প্রায় ১০ হাজার চারা। এর মধ্য থেকে যায় প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার চারা। ইতিমধ্যে কেরটিনা জাতের হলুদ রঙের কপি বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে।
কৃষক আসলাম জানান, নতুন এ রঙিন জাতের কপির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ থাকায় দামও পেয়েছেন ভালো। বাজারে সাধারণ কপির তুলনায় রঙিন কপির দাম প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণ কপি যখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তখন রঙিন এ নতুন জাতের কপি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে কেরটিনা জাতের রঙিন কপি পুরোপুরি বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ভেলেনটিনা জাতের বেগুনি রঙের কপি পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় অল্প পরিমাণে বাজারে তোলা হচ্ছে। আর দুই এক সপ্তাহ পরে এগুলোও বাজারে আসবে। রঙিন কপি চাষ নিয়ে প্রথমে এলাকাবাসী নানা সমালোচনা করলেও, বাম্পার ফলন আর ভালো দাম পাওয়ায় এখন কৃষক আসলামকে অনুসরণ করে এলাকার অনেকেই বিদেশি জাতের কপি আবাদের প্রতি আগ্রহী হয়েছে।
একই এলাকার কৃষক আসাদ শেখ বলেন, প্রথমে আসলামের এই নতুন জাতের কপি চাষ দেখে অনেকেই ব্যাঙ্গ করেছে। ঝুঁকি নিয়ে নতুন জাতের ফসল আবাদের ফলে তার সফল হওয়া নিয়ে সকলের মাঝে দ্বিধা ও অনিশ্চয়তা ছিল, ছিল সমালোচনা। তবে সব ভুল প্রমাণ করেছেন আসলাম। তার এই সফলতা দেখে অনেকেই এখন রঙিন এই কপি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। এমনকি আমিও চিন্তা করছি আগামী বছর ২/৩ বিঘা জমিতে এই জাতের কপির আবাদ করবো।
পাবনার বড় বাজারের ব্যবসায়ী মো. জলিল বলেন, সাধারণ কপির চেয়ে রঙিন এ কপি দেখতে যেমন সুন্দর, স্বাদে ও গুণগত মান অনেক ভালো। রঙিন এই কপির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। সাধারণ কপির তুলনায় দাম বেশি হলেও বাজারে নতুন জাতের এ কপির প্রতি বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, রঙিন এই কপির পুষ্টিগুণ ও গুণগত মান সাদা কপির চেয়ে বেশি। অনেক দিন আগে থেকেই জাপান-ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে রঙিন কপি আবাদ হয়। তবে এখনো আমাদের দেশে আমরা বাণিজ্যিকভাবে এর আবাদ শুরু করতে পারিনি। কেউ কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে আবাদ করছেন। তারা লাভবান হচ্ছেন। বাণিজ্যিকভাবে সুবিধা না দিতে পারলেও আমরা তাদের সবসময় সহযোগিতা করছি।