পরিকল্পিতভাবে মুরগী পালনে স্বাবলম্বী নারীরা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:১৬
--১৪-65cc84f753152.jpg)
মুরগী পালন। ছবি: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
সাংসারিক কাজের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা জেলার গ্রামীণ জনপদে বসবাসরত নারীরা গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগী পালন করে নিজেরাই হচ্ছে স্বাবলম্বী। এরই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী সুলতানপুর গ্রামের ২৫ জন নারী পরিকল্পিতভাবে ১৫০টি বাউ মুরগী পালনের পর ৪৩ দিনের মাথায় বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এতে করে অল্প দিনে ভালো লাভের আশায় এ জাতের মুরগী পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে নারীরা।
চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের গ্রাম সুলতানপুর। অবহেলিত এ গ্রামে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমাগত মানুষের জীবন ধারণের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। এরই মাঝে ২০২৩ সালের গত ১৮ ডিসেম্বর পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রাণীসম্পদ খাত নিরাপদ মাংস উৎপাদনে জলবায়ু সহিষ্ণু বাউ মুরগী পালনের জন্য ২৫ জন নারীকে বেছে নেয়। তাদেরকে ৪৩ দিন পালনের জন্য ১৫০টি মুরগী দেওয়া হয়। এর আগে তাদের বসত বাড়িতে তৈরি করে দেওয়া হয় বাঁশের মাচা। তারপর মুরগী পালনের ধারনা ও কলাকৌশল জানাতে তাদেরকে প্রশিক্ষণ শেষে জীবাণুনাশক ও মুরগীর টিকা দেওয়া হয়।
সীমান্তবর্তী পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মুরগী পালনকারী রহিমা বেগম বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে আমরা জানতে পারি বাউ মুরগী ৪২ থেকে ৪৩ দিনে গড় ১ কেজি ওজন হবে। ১৫০টি মুরগী পালনে এখনো পর্যন্ত ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ মুরগীগুলো যদি বিক্রি করতে পারি তাহলে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা লাভ হবে।
একই গ্রামের চন্দনা খাতুন জানান, ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে ১৫০টি মুরগী পেয়েছিলাম, এর মধ্যে ১৮টি মারা গেছে। মুরগী পুষতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। আশা করি লাভ হবে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. এহ্তেশামুল হক বলেন, আমরা ২৫ জনকে বাউ মুরগী পালনের জন্য ১৫০টি মুরগী দিয়েছি। আগে আমরা আমাদের সদস্যদের মধ্যে এ মুরগী সম্পর্কে আলোচনা করে নিয়েছি। এতে লাভ এবং গ্রহণযোগ্যতা দুটি ব্যাপারই চলে আসে। অনেকে সোনালী ও দেশী মুরগী খেতে চাই। সোনালী মুরগী পালনে দেখা যায় দুই মাসে এর ওজন ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হয়। সে ক্ষেত্রে লাভ কম হয়। কিন্তু বাউ মুরগী ৪২ থেকে ৪৩ দিনে ১ কেজি ওজন হচ্ছে। এ মুরগীর মাংসের স্বাদ সোনালী ও দেশী মুরগীর মত। এ ব্যাপারগুলো জানানো হলে নারীরা মুরগী পালনে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদেরকে ১৫০টি মুরগীর বাচ্চা ও মাচা তৈরি বাবদ খরচ এবং জীবাণুনাশক ও মুরগীর টিকা সঠিকভাবে দেওয়া হয়। মুরগী পালনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তারা সেটা যথাযথভাবে গ্রহণ করে। ৪২ দিনে একেকটি মুরগী ১ কেজিরও বেশি ওজন হয়েছে। সে কারণে এটার গ্রহণ যোগ্যতা অনেক বেড়েছে। অনেকে এ মুরগী পালন বড় আকারে করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ মুরগী পালনে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ মো. মশিউর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন প্রাণীসম্পদ বিষয়ে ব্যাপক কাজ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাউ মুরগী পালনে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাউ মুরগীর বাচ্চা বড় হয় সন্তোষজনকভাবে এবং মৃত্যুর হার কম। ৪৩ দিনের মধ্যে এ বাচ্চা ১ কেজি ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এদিনগুলোতে একেকটি মুরগী ২ কেজি মত খাদ্য গ্রহণ করে। সব মিলিয়ে একটি মুরগী পালনে ব্যয় হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সেটা বিক্রি হয় কেজি প্রতি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। এভাবে যদি কেউ ১০০ মুরগী পালন করে তাহলে ব্যয় বাদে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাভ হবে। এ মুরগীর বৈশিষ্ট্য হলো, এর মাংস খুবই সুস্বাদু। এ মুরগী পালনে গ্রামীণ পুষ্টি ও আমিষের অভাব পূরণসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।