বরিশালে দুই ট্রাক চোরাই সাড়ি-থ্রি-পিস বিক্রির অভিযোগ

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৯

জব্দকৃত চোরাই ভারতীয় সাড়ির ট্রাক। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশালে জব্দকৃত চোরাই ভারতীয় সাড়ি, থ্রি-পিস গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) গভীর রাতে দুটি ট্রাকে কোস্টগার্ড স্টেশন থেকে সাড়ি-থ্রি-পিস গৌরনদীতে পাচারকালে ধরা পড়ে কথিত সাংবাদিকদের কাছে। ওই রাতেই চার লাখ টাকায় রফাদফা করে মালামালসহ ট্রাক দুটি ছাড়িয়ে নেন গৌরনদীর ভাই ভাই মার্কেটের ব্যবসায়ী ভোলা সাহা। তার দাবি কোস্টগার্ডের কাছ থেকে টেন্ডারে সাড়ি-থ্রি-পিস ক্রয় করেছেন তিনি।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বিসিজি স্টেশন বরিশালের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট হারুন অর রশিদ। তার দাবি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে রাতে আটক করা হয় দুই ট্রাক সাড়ি-থ্রি-পিস। তবে মালামালের বৈধ কাগজপত্র থাকায় তা ছেড়ে দিয়েছেন তারা। এখানে গোপনে বেচা বিক্রির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি এই কর্মকর্তার।
এদিকে চোরাই মালামাল আটক ও আদায়কৃত চার লাখ টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন কথিত সাংবাদিকরা। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান এবং বিবি পুকুর পাড়ের একটি রেস্টুরেন্টে তাদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে চাঁদাবাজির রহস্য।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাচারকালে ১০ কোটি টাকার ভারতীয় সাড়ি-থ্রি-পিস জব্দ করে কোস্টগার্ড। এর মধ্যে থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের সাড়ি-থ্রি-পিস সরিয়ে রাখা হয়। যা বাকেরগঞ্জের বাসিন্দা জয়দেবের মাধ্যমে গৌরনদীর ব্যবসায়ী ভোলা সাহার কাছে গত প্রায় ২০-২৫ দিন পূর্বে বিক্রি করা হয়। সেই মালামাল বুধবার রাত ৪টার পরে নগরীর রসুলপুর গোস্টগার্ড স্টেশন থেকে ভোলা সাহার মালিকানাধীন ট্রাকে করে নিয়ে যায়।
ঘটনার সাথে জড়িত আনসার বাহিনীর সাবেক সদস্য সনজিব সিং বর্তমানে নিজেকে সুন্দরবন পত্রিকার সাংবাদিক দাবি করছেন। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত থেকে ভিডিও করেন তিনি। এজন্য চোরাই সাড়ি-থ্রি-পিস আটকে আদায়কৃত চার লাখ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা ভাগ পান সনজিব।
সনজিব সিং বলেন, ভোর ৬টার দিকে তিনি হাটতে বেরিয়ে দেখতে পান নগরীর নাজির মহল্লায় দুটি ট্রাক আটকে রেখেছে কিছু সাংবাদিক। সেখানে গিয়ে জানতে পারি গোস্টগার্ডের জব্দকৃত ৬৩ ডোপ ভারতিয় সাড়ি-থ্রি-পিস পাচারের সময় ট্রাক দুটি আটক করেছেন তারা।
সনজিব সিং বলেন, ট্রাকে থাকা লোকদের মধ্যে সুব্রত নামের একজন আমার পূর্ব পরিচিত। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, কোস্টগার্ডের কাছ থেকে টেন্ডারে সাড়ি-থ্রি-পিস কিনেছেন গৌরনদীর ভোলা সাহা। এগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা আটকে দেয়।
সনজিবের দাবি, জনকণ্ঠের সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া অভি এবং আলোকিত বরিশাল পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া মিরাজ চোরাই মাল ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। এসময় সেখানে অন্তত ১৪-১৫ জন সাংবাদিক এবং তাদের সহযোগীরা ছিল। তাদের মধ্যে টাকা নিয়ে দেনদরবার চলাকালেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সাড়ি-থ্রি-পিসের মালিক গৌরনদীর ব্যবসায়ী ভোলা সাহা। তিনি চার লাখ টাকা দিয়ে দুই ট্রাক মালামাল ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
জনকণ্ঠের সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া অভির সাথে যোগাযোগ করলে পুরো ঘটনাই অস্বীকার করেন। তার দাবি এ ধরনের কোন ঘটনা তার জানা নেই। তবে এর কিছুক্ষণ পরেই ঘটনার প্রমাণ নষ্ট করতে নেমে পরে অভি ও মিরাজ। বিকেলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সনজিব সিংকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ভিডিও ডিলেট করার জন্য বলেন তারা।
এতে রাজি না হয়ে চলে যান সনজিব। পরে বিবি পুকুর পাড়ে কাজলের হোটেলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তখন সাংবাদিকদের দেখে কেটে পড়ে অভি এবং তার সহযোগীরা। এরপর ঘটনার বিস্তারিত সাংবাদিকদের কাছে খুলে বলেন সনজিব।
তিনি বলেন, অভি এবং মিরাজ আমাকে জানিয়েছে চাঁদাবাজি করে আদায় করা চার লাখ টাকার দুই লাখ তারা তাদের সোর্সকে দিয়েছে। বাকি দুই লাখ টাকা ২১ জন সাংবাদিককে ভাগ করে দিয়েছে। তবে একটি পত্রিকার সম্পাদক একা ৬৫ হাজার টাকা এবং অপর একটি পত্রিকার সম্পাদকের ভাই মোটা অংকের টাকা ভাগ নিয়েছে বলে জানান সজিব।
তবে ৬৫ হাজার টাকা ভাগ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আলোকিত বরিশাল পত্রিকার সম্পাদক। তার দাবি এ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি।
অপরদিকে ঘটনার পর থেকেই নিজের ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ করে রেখেছেন গৌরনদীর ব্যবসায়ী ভোলা সাহা। তার ব্যবহৃত হোয়ার্সঅ্যাপ নম্বরে কল এবং বর্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বিসিজি স্টেশন বরিশালের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট হারুন অর রশীদ বলেন, গত ফেব্রুয়ারি যে সাড়ি-থ্রি-পিস জব্দ করা হয়েছিল সেগুলো আমরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। এর প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তবে যেই দুই ট্রাক সাড়ি-থ্রি-পিস নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটা গত বুধবার রাতেই ধরা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর ছিল ভারতীয় চোরাই সাড়ি-থ্রি-পিস পাচার হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে বুধবার রাতে বরিশাল নগরীর আমতলার মোড় থেকে সাড়ি-থ্রি-পিস বোঝাই দুটি ট্রাক আটক করে আমাদের স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাচাই বাছাই করে তেমন কোন অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি। এমনকি ওই মালামালের বৈধ কাগজপত্রও আমাদের দেখিয়েছে এর মালিক। তাই রাতেই সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।