বিদ্যালয়ের নিচতলায় রেস্টুরেন্ট, দোতলায় কমিউনিটি সেন্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৬

বিদ্যালয়ের নিচতলায় ভোজন বিলাস রেস্টুরেন্ট। ছবি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই এটি একটি স্কুল ভবন। খাবারের দোকান বা মার্কেট বলাটাই ঠিক হবে। রেস্টুরেন্টের চকচকে এক সাইনবোর্ড লাগানো আছে ভবনের গায়ে। নাম ভোজন বিলাস। যেটি ভবনের পরিচয় তুলে ধরছে। আর ভবনের দোতলা বরাদ্দ কমিউনিটি সেন্টারের জন্যে। এটিও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভাড়া দেয়ার জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪তলা একটি ভবনের নিচতলা ও দোতলার এই হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যবহার চিত্র।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একটি চিঠি দিলেও সেটি আমলে নেয়নি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
আশুগঞ্জ সোনারামপুর মৌজার ১৯০ দাগের ৯০ শতক খাস জমিতে ১৯৮৩ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের ওই জায়গাতে একটি পেট্রোল পাম্পও রয়েছে। বিদ্যালয়টির বর্তমান ছাত্রছাত্রী প্রায় ১৫শ।
সরজমিন খোঁজখবরে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেন সম্প্রসারণ কাজের জন্যে বিদ্যালয়ের সামনের দিকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয় এবং সেখানে থাকা পুরনো স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হয়। এজন্যে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও পেয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপরই নতুন করে ৪ ও ৫তলা দুইটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। নতুন নির্মিত ৪ তলা ভবনের অবস্থান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বর্ধিত অংশের পাশেই। সম্প্রতি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার দৃশ্যমান হয়।
বিদ্যালয়সূত্র জানায়, ভবনের নিচতলায় দুই সাটার বিশিষ্ট ১১টি দোকান করা হয়েছে। এরমধ্যে ৯টি দোকানের জায়গা নিয়ে রেস্টুরেন্ট ভোজন বিলাস করা হয়েছে। যার একদিকে রয়েছে চাইনিজ, অন্যদিকে বাংলা খাবারের ব্যবস্থা। মাসিক ১লাখ ১৪ হাজার টাকায় এই রেস্টুরেন্টের জায়গাটি ভাড়া নিয়েছেন স্থানীয় আলমনগরের মোস্তাফিজুর রহমান। আর অন্য দুইটি দোকান থাইগ্ল্যাস ও টাইলস ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
ভবনের দোতলাও কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেয়ার উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও এটি মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহারের জন্যে রাখা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে এটি কমিউনিটি সেন্টারের জন্যে ভাড়া দেয়া হবে। সেজন্যে সামনের দিক দিয়ে সিঁড়ি নামানো হবে। যেটি রাখঢাকের মধ্যে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভেতর দিক থেকে ভবনে উঠা এবং মিলনায়তনে যাওয়ার জন্যে একেবারে পশ্চিমপ্রান্তে আপাতত একটি সিঁড়ি রাখা হয়েছে। এর পাশে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকার গেইট করা হয়েছে। যা আগে সম্মুখভাগে ছিলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর পিতা বলেন, দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই সড়ক-মহাসড়কের পাশে। কিন্তু এভাবে বাণিজ্যিক ব্যবহার হতে দেখিনি। তাও আবার গার্লস স্কুলে। আমরা শুনেছি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে দোতলা ভাড়া দেয়া হবে। তাহলে ছাত্রীদের প্রাইভেসির কি হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল আজাদ নিজস্ব অর্থায়নে দুইটি ভবনের নির্মাণ কাজ হয়েছে জানালেও বাকী বিষয়ে কথা বলেননি। একটি অনুষ্ঠানে আছেন বলে ফোন রেখে দেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সেলিম রেজা এবিষয়ে সাক্ষাতের কথা বলবেন বলে জানান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত আকবর খান জানান- কোনো স্কুল ভবনে বাণিজ্যিক কোনো কিছু করা যাবেনা বলে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। সেই আলোকে আমি তাদেরকে এব্যাপারে ৫/৬ মাস আগে চিঠি দিয়েছি। তারা চিঠির রেসপন্স করেনি।