Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ ঠাকুরগাঁওয়ে

Icon

এম ডি হোসাইন, ঠাকুরগাঁও থেকে ফিরে

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ১৭:৪৭

উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ ঠাকুরগাঁওয়ে

আমগাছ। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর হরিণমারী সীমান্তে প্রায় তিন বিঘা জমিজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ২শ বছর বয়সী একটি সূর্যপুরী আমগাছ। মন্ডুমালা গ্রামের এই আমগাছই ঠাকুরগাঁওকে গোটা দেশে পরিচিত করে তুলেছে। এই এলাকার যে কোনো মানুষের সঙ্গে অন্য কারও পরিচয় হলে সহজেই জিজ্ঞাসা করে আপনার বাড়ি শত বছর বয়সী ওই আমগাছের কাছে? 

সূর্যপুরী আমগাছটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী এলাকায় অবস্থিত। মূল আমগাছটি ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু এবং ১২০ ফুট প্রশস্ত। গাছটির সম্পূর্ণ এলাকার পরিধি প্রায় ৮০০ ফুট। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমতো ভাবতে হয়। আমগাছটির ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য শুধু দেশের পর্যটক নয়, বিদেশের অনেক অতিথিকেও আকৃষ্ট করে। ঠাকুরগা্ওঁ শহরের কেন্দ্র হতে জায়গাটির দূরত্ব ৩৪ দশমিক ১ কিলোমিটার। 

সরেজমিনে দেখা যায়, গাছের তিন দিক থেকে ১৯টি মোটা ডালপালা বেরিয়ে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে। দূর থেকে মনে হয়, অনেক আমগাছ জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। বয়সের ভারে ডালপালাগুলো নুয়ে পড়ছে। তবে গাছের শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ। মৌসুমে গাছ থাকে আমে টইটম্বুর। একেকটির ওজন ২৫০-৩৫০ গ্রাম। অন্যান্য আমের চেয়ে এ আমের চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি। টিকিট কেটে আমগাছটি দর্শন করতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। টিকিটের মূল্য ১০ টাকা।

স্থানীয় সাইদুর রহমান ও নূর ইসলামের জমিতে দাঁড়িয়ে আছে আমগাছটি। তারা জানান, পূর্বপুরুষের লাগানো এ গাছটির মালিকানা তারা পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন। পূর্বপুরুষের কথা অনুযায়ী গাছটির বয়স ২২৪ বছরের বেশি। গাছের মালিক নূর ইসলাম বলেন, গাছটি তার বাবার দাদা লাগিয়েছিলেন। সে কথা জেনেছেন বাবার কাছ থেকে। এই আমগাছের চারা থেকে পাশে কয়েকটি গাছ লাগানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটি গাছ এখন মূল গাছটির মতো আকৃতি নিয়েছে। গত বছর এ গাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকার আম বিক্রি করা হয়েছিল। এবারও প্রচুর মুকুল ধরেছে।

খ্যাতির কারণে এ গাছের আমের কদর একটু বেশিই। ব্যতিক্রমী গাছের সুস্বাদু আম পেতে আগ্রহী অনেকেই। অন্যান্য গাছের আম যেখানে বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকায়, ওই গাছের আমের দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। 

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সূর্যপুরী একটি জনপ্রিয় জাত। এই আমটি কেবল ঠাকুরগাঁওয়েই ভালো হয়। এ কারণে জেলার ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে সূর্যপুরীকে ঘিরে। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসকের বাসভবনের নামকরণও করা হয়েছে সূর্যপুরী। তিনি বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন গাছটিকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ রেস্তোরাঁ ও রেস্ট হাউস করতে চাইলে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

বিদেশেও আলোচনা 

সম্প্রতি চীনসহ বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে শতবর্ষী এই আমগাছ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি অনেকে আসেন আমগাছটি দেখতে। তাদের একজন ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ক্রিশ্চিয়ান মার্টিন ফোস। তিনি ২০১৭ সালের মে মাসে আমগাছটি দেখতে এসেছিলেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ অনেকে দেখতে গেছেন গাছটি। আমগাছকে ২০১০ সালে মন্ত্রিসভায় দেশের জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দেওয়া হয়। বহু বছর বাঁচে আমগাছ, কিছু প্রজাতি তো তিনশ বছর বয়সেও ফলবতী হতে পারে বলে জানা যায়।

চট্টগ্রাম থেকে আমগাছটি দেখতে এসেছেন জিয়া উদ্দিন হিরু। তিনি জানালেন, ফরিদপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনি দুটি শতাব্দীপ্রাচীন আমগাছ দেখেছেন। কিন্তু এ আমগাছটি দেখে হতভম্ব হয়ে গেছেন। তিনি জানান, এ আমগাছটি একেবারেই ভিন্ন! ডালপালা মাটিতে নুয়ে পড়েছে।  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫