
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ে শাল-গজারির বন। ছবি: সংগৃহীত
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ে শাল-গজারির বনের অন্তত ১৫টি স্থানে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীর আগুনের থাবা পড়েছে। এতে পাহাড়ের পর পাহাড় আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, বিভিন্ন গাছপালা ও প্রাণী, নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণাগুণ। বনের জমি দখল আর লাকড়ি সংগ্রহ করতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে থাকে বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে চলছে এ বন পোড়ানো। প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ার কারণে পুড়ে যায় ছোট গজারি গাছ (শাল কপিচ), ঝোপঝাড়, লতাপাতা, পোকামাকড়, কেচু ও কীটপতঙ্গসহ নাম না জানা বিভিন্ন প্রাণী। বিনষ্ট হয় বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। পাশাপাশি বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী, কীটপতঙ্গ ও পাখি।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের আওতায় ৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এ তিনটি বিট কার্যালয়ের আওতায় বনভূমি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮৮০ একর। এর মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সমৃদ্ধ বন। প্রতিবছরের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে। বনের মধ্য দিয়ে চলাচলের সড়কপথ থাকায় খুব সহজেই দুর্বৃত্তরা রাতে বা দিনে বনে আগুন দেয়। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বছরের পর বছর ধরে চলছে বন পোড়ানোর এমন ঘটনা।
২৬ এপ্রিল শুক্রবার ঝিনাইগাতী-কামালপুর সীমান্ত সড়কের ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বিট এলাকার গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের চারটি স্থানে বড় আকারে আগুন জ্বলছে। আবার দুটি স্থানে অল্প অল্প আগুন জ্বলছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, কে বা কারা ঘণ্টাখানেক আগে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে শাল-গজারি বনের কমপক্ষে ১৫টি স্থানে এভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
গান্ধী গ্রামের বাসিন্দা মো. লিটন মিয়া বলেন, বনের ভেতর অসংখ্য রাস্তা রয়েছে। কে কখন কোন রাস্তা দিয়ে এসে আগুন দিচ্ছে, তা বোঝার উপায় থাকে না।
বার্ড কনজারভেশন সোসাইটি ঝিনাইগাতী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, যুগ যুগ ধরে মানুষ এভাবে ব্যক্তিস্বার্থে পরিবেশের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। যার অবশ্যম্ভাবী ক্ষতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। খরা, বন্যা ও পশু-পাখির বিলুপ্তি ঘটছে। জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ মানুষকে পরিবেশ ও বন সম্পর্কে সচেতন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের শেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মারুফুর রহমান জানান, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বর্তমান যে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দাবদাহ শুরু হয়েছে তা আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে যে শুধু বনের জীববৈচিত্র্যই হারিয়ে যাবে তা নয়, মানুষও হুমকির মুখে পড়বে।
রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সময়ে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে দুই-তিন ইঞ্চি উঁচু স্তরে জমা আছে। এতে আগুন ধরিয়ে দিলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বনের ভেতর আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা অল্প সংখ্যক স্টাফ নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। পাশাপাশি দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।