
কমলার বাগান। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
কমলা ও মাল্টাকে এখন আর বিদেশি ফল বলা যাবে না। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন এর চাষ হচ্ছে। উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলাতেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কমলা-মাল্টা। বড় আকারের হলুদ কমলা ও মাল্টা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এ অঞ্চলে কমলা-মাল্টা চাষে কৃষি অর্থনীতিতে বিরাট অবদানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব ফলের বাগান দেখতে আসছেন সাধারণ মানুষ।
কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসন ২০২০ সালে খাস জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন। ঠাকুরগাঁওয়ে সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় মাল্টা চাষ শুরু করেন সাবেক জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ করনাইট নতুন বাড়ি গ্রামে ৬ বিঘা মাটিতে সবুজ মাল্টা, চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান দিয়েছেন স্কুল শিক্ষক শাহজালাল জুয়েল।
তিনি বলেন, এক বন্ধুর পরামর্শে কমলা ও মাল্টার বাগান দেই। গত বছর প্রথমবার প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করেছি। আর চলতি মৌসুমে বাগানের প্রতিটি মাল্টাগাছ ফলে ফলে ভরে উঠেছে। এবার এই বাগান থেকেই ৫ লাখ টাকার বেশি মাল্টা বিক্রির আশা করি। প্রতিদিন শত শত মানুষ আমার বাগান দেখতে আসছে।
দেশের সর্বোত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরা এখন জুয়েলের মতো মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বাড়ির আঙিনায় শখের বশে অনেকেই মাল্টাগাছ রোপণ করলেও এখন মাল্টা চাষ এলাকায় বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষে উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলনের পাশাপাশি উৎপাদিত মাল্টা খেতেও সুস্বাদু হচ্ছে। এতে দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। সেই সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে মাল্টা চাষির সংখ্যা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ৮৬০ জন কৃষক কমলা ও মাল্টা চাষে জড়িত। ইতোমধ্যে জেলায় ১টি হাজার মাল্টা ও ৬০টি কমলার বাগান গড়ে উঠেছে। পঞ্চগড় জেলায় এ পর্যন্ত মোট ২১ হেক্টর জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ চাষিই বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করছেন।
পঞ্চগড় জেলার মাল্টা চাষি মাহমুদুল হাসান বলেন, মাল্টার চারা রোপণের পর এক বছরের মধ্যেই ফল চলে আসে। আবার বিক্রিতেও ঝামেলা নেই। ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকেই ফল কিনে নিয়ে যান। লাভজনক হওয়ায় ভবিষ্যতে বাগান আরও বড় করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে অনেকেই মাল্টা বাগানে পেঁপে, কমলাসহ বিভিন্ন ফলের চারা রোপণ করে মিশ্র বাগান তৈরিরও চেষ্টা করছেন। এতে মাল্টা চাষের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জেলার বোদা উপজেলার তেপুকুরিয়া এলাকায় ৫০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে মাল্টা বাগান করেছেন আব্দুল কাদের। ৫০ বিঘা জমিতে তিনি ৬ হাজার ২০০টি বারি-১ জাতের মাল্টাগাছের চারা রোপণ করেছেন। মাল্টাগাছের মাঝে কিছু পেঁপেগাছও লাগিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী। মাল্টা পাহাড়ি ফল হিসেবে পরিচিত হলেও মাটির গুণাগুণ ঠিক থাকলে সমতল এলাকাতেও লাভবান হতে পারেন কৃষকরা। কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও মাল্টা চাষ হচ্ছে। এটি নানাভাবে প্রচারও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পঞ্চগড় জেলার উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, আমরা কৃষি বিভাগ থেকে চারা, সার, কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করে চাষিদের পাশে রয়েছি। আশা করছি, একসময় এই জেলায় কমলা ও মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটবে।