বরিশালে যৌন হয়রানির অভিযোগে স্কুলশিক্ষক বরখাস্ত

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ২৩:৫৩

বরিশাল জেলার মানচিত্র। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
বরিশাল নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আবারও ১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে। গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে আজ শনিবার (১১ মে)।
স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ৫ মে ষষ্ঠ শ্রেণির ১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে শিক্ষক মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ৬ মে প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। পরে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অভিযোগ তদন্ত করে সতত্যা পাওয়ায় ওই শিক্ষককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। আগেও একই অভিযোগে শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় বলে দাবি প্রধান শিক্ষক এসএম ফখরুজ্জামানের।
তবে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে স্কুলের মধ্যেই সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কেননা ইতিপূর্বে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্বে অপর এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু আদালতে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তাই নতুন করে অপর শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের নেপথ্যে কোচিং বাণিজ্য রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিযোগ, ঘটনার দিন গত ৫ মে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আইসিটি ক্লাস ছিল। তখন ওই শিক্ষক ক্লাসে গিয়ে ছাত্রীদের পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন। এ ঘটনা শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের জানান।
অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষকের এমন আচারণ দীর্ঘ দিনের। এমন হলে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো দায় হয়ে উঠবে। এজন্য ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক মাইদুল ইসলাম। তার দাবি স্কুলের অভ্যন্তরীণ অপরাজনীতির শিকার হয়েছেন তিনি। এখানে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এবারের যৌন হয়রানির ঘটনার পেছনেও কোচিং বাণিজ্যের কোন বিষয় থাকতে পারে। সূত্রটির দাবি, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের কোচিং করান শেখ জেবুন্নেছা নামের একজন শিক্ষক। যিনি গত এক বছর আগে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে আতাত করে গত এক বছর ধরেই তিনি শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য।
একইভাবে যৌন হয়রানির শিকার মাইদুল ইসলামও করে আসছেন কোচিং বাণিজ্য। তিনিও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করান। এ নিয়ে ভেতরগত কোন দ্বন্দ্ব রয়েছে কিনা তা স্কুল বা শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিৎ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম ফখরুজ্জামান বলেন, ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্কুল পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান তিনি।