চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যালয়ের গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলার অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১৪:২৪

রায়পুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরের গাছ। ছবি: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরের গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাটা গাছগুলো জব্দ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা মমতাজ।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রধান শিক্ষক মো. সাইদুর রহমান মিলে বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে থাকা ৩৭টি মেহগনি গাছ অবৈধভাবে কেটে বিক্রির পাঁয়তারা করছিলেন।
জব্দকরা গাছগুলো রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা তাহাজ্জত হোসেনের জিম্মায় রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা মমতাজ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। ৫ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব ১০ কাঠা জমিতে ৩৭টি মেহগনি গাছ ছিল। ওই গাছগুলোর উপর নজর পড়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রধান শিক্ষক মো. সাইদুর রহমানের। তারা দুইজনে মিলে গত ঈদের ছুটির ভেতর বিক্রির উদ্দেশ্যে গোপনে গাছগুলো কাটেন। ঈদের তিনদিন আগে গাছগুলো কাটার সময় গ্রামবাসী বাধাও দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গ্রামবাসী জানায়, অবৈধভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে গাছগুলো কাটা হয়েছিল। বিদ্যালয় চত্বরের গাছ হওয়ার কারণে বিক্রি করতে পারেনি। এ ঘটনায় গ্রামবাসী চরম ক্ষুব্ধ হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.সাইদুর রহমান বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে শুধু একটা রেজুলেশন করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক অনুমোদন ছাড়া গাছ কাটতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদ্যালয়ের ফার্নিচার তৈরি করার জন্য রেজুলেশন করে গাছগুলো কাটা হয়েছে।
রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা তাহাজ্জত হোসেন বলেন, গাছগুলো কাটার ব্যাপারে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফার্নিচার তৈরির অজুহাত তুলে যে গাছগুলো কাটা হয়েছে তা একেবারে নিয়ম বহির্ভূত। অবৈধভাবে গাছগুলো কেটে এখন খোড়া যুক্তি দেখানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, যে গাছগুলো কাটা হয়েছে তা দিয়ে চেয়ার, বেঞ্চ বা টেবিল তৈরি করা সম্ভব না। নিশ্চয় কর্তৃপক্ষের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। এ বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা মমতাজ বলেন, কোনো বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গাছ কাটতে হলে প্রথমে নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ একটা রেজুলেশন করবে এরপর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটা আবেদন করবেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর ওই কমিটি নিয়ম অনুযায়ী গাছ টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অথবা নিলামে বিক্রি করবেন। কিন্তু রায়পুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গাছ কাটার ব্যাপারে নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার বিকালে কেটে ফেলা গাছগুলো জব্দ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী গাছগুলো না কাটায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ৫ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। নোটিশের জবাব পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।