পাকিস্তানের বদলে এখন ২২ হাজার পরিবার অর্থনীতি ধ্বংস করছে: উদীচী

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১৩:২০

বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেছেন, এক সময় আমরা পাকিস্তানের ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়েছি; এখন ২২ হাজার পরিবার দেশের অর্থনীতিতে ধ্বংস করছে, লুট করছে। এখন বাজারের যে অবস্থা পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে গেলেও ব্যাগভর্তি বাজার আনতে পারি না। সেখানে আমাদের দেশের কৃষকের কী অবস্থা ভেবে দেখুন। ঢাকার বাজারে বেগুন যদি ৮০ টাকা বিক্রি হয়, যেখানে তারা গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করেন ৫-১০ টাকায়। মাঝখানে এক শ্রেণির মধ্যসত্ত্বভোগী তৈরি হয়েছে। এ ধরণের একটা নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা যারা সংস্কৃতিকর্মী আছি, প্রগতি সাম্যের কর্মী আছি তাদের দায়ও অনেকখানি।
আজ শুক্রবার (২৪ মে) বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা উদীচীর নবম সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের সম্মেলনের স্লোগান- পাহাড়ে-সমতলে গেয়ে যাই গান; অধিকারে প্রতিরোধে জেগে ওঠো প্রাণ।
সভায় উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা এই দেশকে মেনে নিতে পারেনি। তারা এখনো এই দেশকে অস্বীকার করে; পাকিস্তানের তোষণ করে। এক শ্রেণি আছে যারা সম্পদে ফুলে যেতে যায়। এদের থামাতে কাউকে না কাউকে দাঁড়াতে হয়; উদীচী সেখানে দাঁড়াতে চায়। উদীচীর জন্ম একটা ক্লান্তিকালে। একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে উদীচীর জন্ম হয়েছিল। যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, শোষণ হচ্ছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে তখনই এই উদীচীর জন্ম।
অমিত রঞ্জন বলেন, একটা গণতন্ত্রহীনতার মধ্য দিয়ে আমরা অতিবাহিত করছি। আমরা কথা বলতে পারছি না, কন্ঠরোগ করা হচ্ছে। সাংবাদিক-লেখকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) দিয়ে হয়রানি-কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিলের মধ্যে যে কালো অধ্যায়গুলো রয়েছে; সেগুলো নিয়ে আপনাদের জানতে চান। এগুলোর মাধ্যমে শ্রমিকদের তারা শাস্তি দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি, যারা তাদের (শ্রমিক) সহযোগিতা করবে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে। তাহলে যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন হলাম সেই স্বাধীনতা কি আছে। দেশে কি গণতন্ত্র আছে? আমরা কি ভোট দিতে পারছি? আজকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালাতে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। অথচ ধর্মীয় সব আয়োজন করা হচ্ছে। কেবল বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে যেসব কাজ আমাদেরকে বিকশিত করবে। এদেশের সম্পদ রক্ষা, প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে উদীচী অবদান রয়েছে।
সম্মেলনের আলোচনা সভায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী রাঙ্গামাটি জেলা সংসদের সভাপতি অমলেন্দু হাওলাদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিজয় ধরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও উদীচী চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব জহির উদ্দিন বাবর, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক সুকুমার বড়ুয়া, সদস্য সচিব সাগর পাল প্রমুখ।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি সমীর কান্তি দে, সহকারী সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশীষ দাশগুপ্ত প্রমুখ। এসময় উদীচীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী এবং ছাত্র-যুব সংগঠকরা অংশগ্রহণ করেন। এর আগে, সকালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি র্যালি শুরু হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে মিলিত হয়।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন বিকালে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন রয়েছে।