Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

মেঘনা নদীতে অবাধে চলছে গলদা রেণু শিকার

Icon

খান রুবেল, বরিশাল

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ১৫:৩১

মেঘনা নদীতে অবাধে চলছে গলদা রেণু শিকার

নদীতে প্রকাশ্যেই চলছে গলদা চিংড়ি রেণু শিকার। ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের হিজলা উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে প্রকাশ্যেই চলছে গলদা চিংড়ি রেণু শিকার। আর রাত হলেই নদীপথে বরিশাল এবং সরিয়তপুরে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকার রেণু পোনা। যার নেপথ্যে রয়েছেন হিজলার জসিম সরদার ও মেহেন্দিগঞ্জের ভাষাণচরের দেলোয়ারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।

তবে এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই মৎস্য বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান করেই চুপসে যাচ্ছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, মিডিয়া থেকে শুরু করে সকল মহলকে ম্যানেজ করেই মেঘনা নদীতে চলছে চিংড়ি রেণু পোনা শিকার এবং পাচার।

তবে ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করলেও সিন্ডিকেটের বিপক্ষে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন, হিজলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলী। তার দাবি, রেণু পোনা পাচারকারী সিন্ডিকেট বড়ই শক্তিশালী। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে এদের ধরতে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানান তিনি।

স্থানীয় জেলেসহ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই হিজলা এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাধীন মেঘনা নদী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রেণু পোনা পাচারকারী চক্র। তারা মেঘনা নদী থেকে গলদা চিংড়ি রেণু শিকার করে তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চোরাই পথে পাচার করছেন খুলনা, যশোর এবং সাতক্ষীরাসহ দেশর বিভিন্ন স্থানে।

সূত্র আরো জানিয়েছে, রেণু পোনা শিকারের জন্য সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জেলে নিয়ে আসা হয়েছে মেঘনা নদীতে। তারা স্থানীয় জেলেদের নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় দিনভর রেণু শিকার করে। রাত হলেই তা নদী পথেই পাচার করা হচ্ছে। এরপর হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে সড়ক পথে। বিশেষ করে হিজলার মেঘনা নদী হয়ে এসব চিংড়ি রেণু গভীর রাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী এবং শরীয়তপুরে।

মেঘনা নদীর একাধিক জেলেদের দাবি, ‘হিজলা উপজেলার বাসিন্দা জসিম সরদারের নেতৃত্বে চলছে রেণু পাচার। হিজলা থেকে শরীয়তপুরে রেণু পোনা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এমনকি প্রশাসন থেকে শুরু করে মিডিয়া ম্যানেজ পর্যন্ত তারই দায়িত্ব। উপজেলার শাওড়া এলাকায় ঘাটি জসিমের। সেখান থেকেই বিভিন্ন রুটে পাঠানো হয় চিংড়ি রেণু পোনা। যদিও এর সাথে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী নেতা এবং জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত জসিম সরদার।

নিজেকে রেণু পোনা পাচার চক্রের সাথে জড়িত না থাকার কথা দাবি করে জসিম বলেন, আমরা তো চুনাপুটি। রাঘব-বোয়ালদের নিয়ে কেউ কোন কথা বলে না। তবে রাঘব-বোয়াল কারা তা নিয়ে মুখ না খুললেও জসিম উদ্দিন বলেন, হিজলা থেকে চিংড়ি রেণু পোনা পাচার চক্রের মূল দায়িত্বে রয়েছে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষাণচরের বাসিন্দা দেলোয়ার। তিনিই মেহেন্দিগঞ্জ ও ইলিশার মধ্যবর্তী স্থান হতে রেণু পোনার চালান বরিশাল সদর উপজেলার তালতলিতে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে আবার অন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পোনা পাচার করা হচ্ছে। তবে পোনা পাচারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে ভোলা থেকে। যদিও দেলোয়ার নামের ওই ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোন নম্বর চাওয়া হলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন জসিম।

এদিকে চিংড়ি রেণু পোনা পাচার চক্রের দৌড়তের কাছে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন, হিজলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, আমি বা উপজেলা প্রশাসন রেণু পোনা পাচার চক্রের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেই না তা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। তবে এই চক্রের কাছ থেকে স্থানীয়ভাবে কমিশন নেয় না এমন লোক খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে নিয়ে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু কোন অভিযানেই সফলতা পাইনি। হয় তাদের তথ্য সঠিক ছিল না, না হয় অন্য কিছু। তবে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে পাচার চক্রকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মৎস্য কর্মকর্তা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে বলেন, আমি চক্রের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও হতে পারে আমার অফিসের অন্য কোন স্টাফ বা মাঝিরা জড়িত থাকতে পারে। কেননা আমি অভিযানে বের হলেই সেই খবর মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে রেণু পোনা পাচার চক্রের কাছে। আবার নৌ-পুলিশকে নিয়ে অভিযানে গেলে সেখান থেকেও তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে। চক্রটি এতোটাই চতুর যে তারা আমার গতিবিধি লক্ষ্য করছে গোপনে। আমি কোথায় যাই, কি করি এসব বিষয়ে খোঁজ রাখছে সর্বক্ষণ। তার ওপর মেঘনা নদীর জেলেরা এতোটাই ভয়ঙ্কর যে, তাদের ভয়ে থানা পুলিশও এখন নদীতে অভিযানে যেতে চাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কারা রেণু পোনা পাচার চক্রের সাথে জড়িত তাদের অনেকের নাম আমরা জানা। জসিম নামের যে লোকের নাম উঠে আসছে সেও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে শুনেছি। ইতিপূর্বে সে কোস্টগার্ডের মাঝি ছিল। জসিমকে ডেকে এনে সতর্ক করা হয়েছে।

তবে দেলোয়ার নামের ব্যক্তির বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় জেলে এবং আমাদের ট্রলার মাঝিদেরই আমরা সোর্স ব্যবহার করি। হতে পারে তাদের সাথে যোগাযোগ করে চক্রটি সুযোগ বুঝে তাদের কাজ করছে।

এরপরও সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য থাকলে যে রাতেই হোক রেণু পোনা শিকার এবং পাচার চক্রকে ধরতে অভিযান পরিচালনার কথা বলেন তিনি। এজন্য প্রয়োজনে গোপনে অথবা প্রকাশ্যে হলেও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫