
মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
লালমনিরহাটে ভূড়িধোয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা আবুল বাশার নাঈমী ও সভাপতি মমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বার বার নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের নামে বাণিজ্যের প্রতিবাদে এবং নিয়মিত ক্লাস চালুর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার (২৬ মে) সকালে সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের ওই মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে দুই শতাধিক এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, সাবেক ইউপি সদস্য সাইরুল ইসলাম, মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য এরশাদুল হক, অভিভাবক সিরাজুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, মনতাজুর রহমানসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কোনো পরিবেশ নেই মাদ্রাসাটিতে। ফলে প্রকৃত শিক্ষা ও জ্ঞানার্জন থেকে বঞ্চিত স্থানীয় শিশু-কিশোররা। অথচ কর্মচারী নিয়োগের নামে একের পর এক ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নিয়োগের নামে বাণিজ্য করছে সভাপতি ও সুপার।
মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য এরশাদুল হক বলেন, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে গত ২০১৮ সালে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০২০ সালে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় নিরাপত্তাকর্মী পদে ইয়াছিন আলী এবং আয়া পদে তহমিনা বেগমকে নির্বাচিত ঘোষণা করে চূড়ান্ত ফলাফল লিখিতভাবে দেয় নিয়োগ কমিটি। কিন্তু চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরেও পদ দুটিতে তাদের নিয়োগপত্র না দিয়ে তাদের কাছে মাদ্রাসা সুপার মাওলানা আবুল বাশার নাঈমী দশ লাখ টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে তারা সহায়সম্বল বিক্রি করে সুপারের হাতে দশ লাখ টাকা দেন। দীর্ঘদিন টালবাহানার পর গত ২৩ মার্চ সকাল ১১ টার দিকে পূর্বের নির্বাচিত প্রার্থী দুইজনকে ওইদিনই পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মাদ্রাসার দপ্তরীকে দিয়ে চিঠি পাঠায়। তারা দুইজন চিঠি পেয়ে মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে প্রথম নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সিট দেখান নিয়োগ কমিটির সদস্যদের। ফলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৮ মার্চ জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন ইয়াছিন আলী। সেই অভিযোগের সুরাহা না হলে গত এপ্রিল মাসে ইয়াছিন ও তহমিনা বাদী হয়ে নিয়োগ কমিটির পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলা হওয়ার পরেও গত ১৯ মে আবারও নিয়োগ পরীক্ষার একটি চিঠি পান ইয়াছিন ও তহমিনা। চিঠিতে পরীক্ষার তারিখ ছিল ১৭ মে। দুইদিন আগে হয়ে যাওয়া পরীক্ষার জন্য দুইদিন পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য চিঠি পাওয়ায় তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বার বার নিয়োগ পরীক্ষার নামে অবৈধভাবে ঘুষ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তারা আবারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। একই পদে নিয়োগের জন্য একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে সভাপতি ও সুপার।
অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আইরিন, আখি মনি, হাবিবা আক্তার, রুবাইয়া, মিরাজ সহ অনেকে জানায়, দীর্ঘ তিন মাস ধরে সুপার মাদ্রাসায় আসেন না। এমনকি দুই একজন শিক্ষক ছাড়া বাকিরা মাদ্রাসায় এলেও স্বল্প সময় ক্লাস নিয়ে চলে যান। কিছু কিছু বিষয়ের ক্লাস একদমই হয় না বলে বলে তাদের অভিযোগ। এমনকি আগামীকাল পরীক্ষার তারিখ থাকলেও এখনো পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়নি।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদ্রাসাটির এবতেদায়ী শাখায় তিনজন শিক্ষক থাকলেও একজন শিক্ষার্থীও নেই ওই শাখায়। এমনকি ওই শিক্ষকরা মাদ্রাসাতেও আসেন না। অথচ তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। এছাড়া মাদ্রাসাটির অন্যান্য বিষয়ের সকল শিক্ষক নিয়মিত মাদ্রাসায় না এলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রথম নিয়োগ পরীক্ষার সময় আমি সভাপতি ছিলাম না। আমার সময়ে যে নিয়োগের প্রক্রিয়া হয়েছে তার জন্য মাদ্রাসার সুপার এবং গোকুন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করুন তারা বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার আবুল বাশার নাঈমী এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লিপিকা দত্তের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও এবিএম আরিফুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।