Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পুঠিয়ায় জমে উঠেছে আমের হাট, দাম চড়া

Icon

পুঠিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১৬:৫৮

পুঠিয়ায় জমে উঠেছে আমের হাট, দাম চড়া

রাজশাহীর আম। ছবি: পুঠিয়া প্রতিনিধি

রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে জমে উঠেছে আমের বাজার। গোপালভোগ বা রানিপছন্দসহ কেনা-বেচা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুটি জাতের আমও। তবে হাটে পাইকারির চেয়ে খুচরা ক্রেতা কম। গত মৌসুমের তুলনায় এবার সব আমের দাম বেশি বলেছেন- ক্রেতা-বিক্রেতারা। গত মৌসুমের তুলনায় এবার প্রতি মণ আম ১ হাজার টাকা বেশি দামে কেনা-বেচা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে গুটি জাতের পরে এই প্রথম সুস্বাদু কোনো আম বাজারে উঠেছে। উপজেলার বানেশ্বর হাটে সব গুটি জাতের আমের মধ্যে গোপালভোগ কেনা-বেচা হয়েছে। এই হাটে প্রকারভেদে প্রতিমণ গোপালভোগ আম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। আর গুটি জাতের আম প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।

আম হাটে গিয়ে দেখা গেছে, চরঘাট, বাঘা, মোহনপুর, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলার আম কেনা-বেচা হচ্ছে বানেশ্বর হাটে। হাটে চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ি ও ইঞ্জিনচালিত নসিমন-করিমনে আম নিয়ে আসছেন। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০টি ক্যারেট (আম রাখার ঝুড়ি) আম থাকছে। সড়কের উপরে বসা আমের হাটে কেনা-বেচা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হাটে শুধু পাকা আমই নয়, আচার তৈরির জন্য অনেক ব্যবসায়ী ও প্রাণ কোম্পানি ও অন্যান্য কোম্পানির প্রতিনিধিরা কিনছেন কাঁচা আমও। তবে আচার তৈরির এসব আম প্রতিমণ কেনা-বেচা হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।


৩৫টা গাছ নিয়ে আলমগীর হোসেনের গোপালভোগ আমের বাগাম। তিনি ৪টি গাছে আম পেড়ে বানেশ্বর হাটে বিক্রি করতে এসেছেন। আলমগীর বলেন, গাছে পাকা আম দেখা দিয়েছে। রাতে পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। তাই আজ প্রথম গোপালভোগ জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। চারটি গাছের আম হয়েছে ৭৩ ক্যারেট।

বাজারে আমের দাম কেমন মনে হচ্ছে এমন কথার উত্তরে আলমগীর হোসেন বলেন, গতবছরের তুলনায় এবছর আমের দাম ভালো আছে। শেষ পর্যন্ত এমন দাম থাকলে ভালো টাকা পাবেন বলে আশা করেন তিনি। এ বছর গাছে আম কম। তাই চাহিদা বেশি। অনেক ব্যবসায়ী গিয়ে বাগান চুক্তি আম কিনতে চাচ্ছে, দেয়নি। গত বছর মৌসুমের শুরুর এই সময়ে আমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কিন্তু এ বছর প্রতি মণে এক হাজার টাকা বেশি।

বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতা মামুন জোয়াদ্দার বলেন, আজকেই প্রথম হাটে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ আম বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছে। তবে গুটি জাতের আমের চাহিদা কম। যারা কিনেছেন তারা আচার করার জন্য কিনেছেন। তবে এখন গোপালভোগ আম কেনা-বেচা হচ্ছে, সেই আম মানুষ পাকা অবস্থায় খাবে। এখন আস্তে আস্তে সব আম পেকে যাবে।

চাকরির সুবাদে রাজশাহীতে গত বুধবার এসেছিলে বরিশাল জেলার আতিকুর ইসলাম। বাড়ি ফেরার পথে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে কার থামিয়ে আম কিনতে দেখা গেছে তাকে। এসময় তিনি বলেন, রাজশাহীর আমের সুনাম দেশব্যাপী আছে। রাজশাহীতে এসেই আম খেয়েছি। তবে সেই আম ততটা তার ভালো লাগেনি। তাই বাড়ি ফেরার পথে বানেশ্বর হাট থেকে দুই মণ গোপালভোগ আম কিনেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, শুক্রবার যে আম খেয়েছিলাম তার থেকে হাটে খাওয়া গোপালভোগ আমের স্বাদ ভালো লেগেছে। এই আম মিষ্টি ভালো। কয়েকটা পাকা ছাড়া সব আম কাঁচা কিনেছি। তার থেকে প্রতিমণ আমের দাম নিয়েছে ২৮০০ টাকা। তিনি বলেন, রাজশাহীতে আসার আগে পরিবারের সদস্যরা তাকে আম নিয়ে যেতে বলেছিল। তাই আরো বেশি করে নিয়ে যেতে হচ্ছে আম।

আড়তে আম বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, হাটে আম বিক্রি হচ্ছে ঠিক। তবে খুচরা ক্রেতা কম। বেশিরভাগ আম আড়ৎদাররা কিনে নিচ্ছেন। তারা একসাথে চাষি ও ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি করে আম কিনে ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠায়। তবে সড়কের পাশে খুচরাভাবে আম কেনা-বেচা হচ্ছে। হাটে প্রতিদিন আম কেনা-বেচা হচ্ছে। তারমধ্যে এখন পর্যন্ত হাটের দিন (শনিবার-মঙ্গলবার) বেশি আম কেনা-বেচা হয়।

ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বছর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।


বানেশ্বর আম হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, রাজশাহীর সবচেয়ে খেতে ভালো এমন আমগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া। হাটে গোপালভোগ আম আশা শুরু হয়েছে লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া আসতে বাকি। হাটে আমের আমদানি বেড়েছে। এবার তুলনামূলক আমের ফলন কম। তবে ফলন কম হলেও আমের দাম ভালো আছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে গোপালভোগ আমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কিন্তু এ বছর একই সময় প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। এ বছর আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এবার এই অঞ্চলে বড় ধরনের কোনো ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়নি। তাই কম মুকুল আসলেও যেসব আম গাছে ধরেছিল সেগুলো টিকে গেছে। দাম ভালো পাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে আশা করছি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫