Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

যশোরের ধুলগ্রামে হারিয়ে যাওয়া এক ইতিহাস

Icon

আব্দুল্লাহ সুমন

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১৮:২০

যশোরের ধুলগ্রামে হারিয়ে যাওয়া এক ইতিহাস

মন্দির। ছবি: লেখক

প্রাচীনকাল থেকেই যশোরের অভয়নগর উপজেলা সমৃদ্ধ। উপজেলায় ধুলগ্রাম নামে একটি ছোট্ট গ্রামে ১২টি মন্দিরের একটি গ্রুপ মন্দির কমপ্লেক্স ছিল। ঐতিহাসিক নথি অনুসারে, দেওয়ান হরিরাম মিত্র ১৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দে চাঁচড়া রাজের নির্দেশে এই মন্দিরগুলি তৈরি করেছিলেন।

এই স্থাপনা নিয়ে প্রচলিত আছে বেশ আকর্ষণীয় এক গল্প।

মুঘল আক্রমণে পরাজিত ও বন্দি হয়েছেন যশোরের তৎকালীন প্রতাপশালী রাজা প্রতাপাদিত্য। রাজার এক বংশধর নীলকণ্ঠ রায় আশ্রয় নিলেন ভৈরব নদের তীরবর্তী অঞ্চলে। তার রাজকন্যা, নাম অভয়া ভৈরব নদের আলো হাওয়ায় বড় হয়ে উঠতে লাগল। নড়াইলের জমিদার বংশের নীলাম্বর রায়ের সঙ্গে তার বিয়ের কিছুদিন পরেই বিধবা হলেন অভয়া দেবী।

তিনি ছিলেন দেবতা শিবের উপাসক। বিধবা হওয়ার পর অভয়া দেবী পিতার কাছে শিব মন্দির তৈরি করে দেওয়ার আবদার করলেন। পিতা নিঃসঙ্গ কন্যার আবদার পূরণে বিলম্ব করলেন না। 

বাঘুটিয়ার হরিরাম মিত্র চাঁচড়া রাজা নীলকণ্ঠ রায়ের দেওয়ান (মুখ্যমন্ত্রী) ছিলেন। রাজা  হরিরাম মিত্রকে তার বিধবা কন্যা অভয়ার জন্য একটি রাজপ্রাসাদ এবং বেশ কয়েকটি শিব মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন। দেওয়ান হরিরাম মিত্রের নিজের কোনো বাড়ি ছিল না। এই কারণে রাজা তার দেওয়ানকে নিজের জন্যও মন্দিরসহ একটি বাড়ি তৈরি করতে বলেছিলেন। দেওয়ান মিত্র ভৈরব নদীর তীরে অভয়নগরের সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের ধুলগ্রাম গ্রামে ১৭৪৫ থেকে ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে নিজের জন্য একটি নতুন বাড়ি ও ১২টি শিব মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন। তা ছাড়া রাজা নীলকণ্ঠ রায়ও অভয়নগরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবদেবীর জন্য পৃথক মন্দির স্থাপন করেন।

কিন্তু ধুলগ্রাম গ্রুপ মন্দির কমপ্লেক্সের অধিকাংশ মন্দির কালক্রমে ভৈরব নদীতে ধ্বংস হয়ে যায়। নদীর তীরে এখনো কয়েকটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। ধুলগ্রাম মন্দির চত্বরে এখন একটি মাত্র শিব মন্দির রয়েছে। একসময় মন্দিরটি সুন্দর পোড়ামাটির ফলক দ্বারা সজ্জিত ছিল। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে টিকে থাকা একমাত্র মন্দিরটিও তার সৌন্দর্য হারিয়েছে। মন্দিরের গম্বুজ ছোট ছোট গাছ-গাছালিতে ভরে গেছে। কোণগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অবশিষ্ট অংশগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়ছে। যদিও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখনো এটিকে একটি সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করেনি।

ধুলগ্রাম শিব মন্দির কমপ্লেক্স এর শান্তিপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য সারা দেশ থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে কেবল কিছু আবেগপ্রবণ ইতিহাসপ্রেমীরাই মন্দির চত্বরে যান। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জায়গাটির সংস্কার ও প্রচার করে, দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ঐতিহাসিক স্থানটি দেখতে আগ্রহী হবেন, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫