Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

রেমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড দক্ষিণাঞ্চল, নিহত ১৬

Icon

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ২০:৪৭

রেমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড দক্ষিণাঞ্চল, নিহত ১৬

বরিশাল বিভাগের গোটা উপকূলীয় এলাকাই এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে গোটা দক্ষিণাঞ্চল। ঝড়ের তাণ্ডবে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে পিরোজপুরে। বিধ্বস্ত হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি-ঘর এবং গাছপালা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোটি কোটি টাকার কৃষি খামার, ফসল এবং মাছের ঘের।

এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা। দুই কোটিরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। অতিভারী বর্ষণ আর তীব্র জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি।

স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাত থেকে আট ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। ফলে বরিশাল বিভাগের গোটা উপকূলীয় এলাকাই এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। পানিবন্দী হয়ে দুর্বিসহ জীবন কাটছে শত শত গ্রামের বন্যাদুর্গত লাখ লাখ মানুষ।

বরিশাল বিভাগে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে বরিশাল নগরীসহ জেলায় ৩ জন, পটুয়াখালীতে ৩ জন, ভোলায় ৩ জন, বরগুনায় ১ এবং পিরোজপুরে ৬ জন।

বরিশাল জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২৭ মে) ভোর ৪টার দিকে নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন লিলি পাম্পের সামনে একটি নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে পাশে খাবারের হোটেলের ওপর পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়ে।

তারা হলেন, হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। এ ঘটনায় শাকিব নামে এক হোটেলকর্মী আহত হয়েছেন। নিহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন।

বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডাল ভেঙে জালাল সিকদার (৫৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের চর দাড়িয়াল এলাকার বাসিন্দা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গত রোববার দুপুরে ফুফু ও বোনকে নিরাপদ স্থানে আনতে যাওয়ার পথে জোয়ারের পানিতে ডুবে শরীফ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। শরীফ উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় বাসিন্দা।

দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নলদোয়ানিয়া স্লুইসগেট এলাকায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছ চাপায় জয়নাল হাওলাদার নামের একজন মারা গেছেন। 

বাউফলে ঘরচাপা পরে করিম খান (৬৫) নামের এক ভিক্ষুকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধান্দি গ্রামের সোবহান খানের ছেলে।

বরগুনা সদর উপজেলায় ঘরের ওপর পড়া গাছ সরাতে গিয়ে আব্দুর রহমান বয়াতি (৫৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা।

ভোলার লালমোহন উপজেলায় ঘর চাপায় মনেজা খাতুন (৫৪) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার ভোর রাতে উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় প্রচণ্ড বাতাসে ঘর ভেঙে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মনেজা খাতুন ওই গ্রামের সিদ্দিক মাঝির মেয়ে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউনিয়নের জাহাঙ্গির (৫০) ও দৌলতখান পৌর সভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে মনিরের মেয়ে য়ে মাইশা (৪) রেমালের কবলে পড়ে মারা গেছেন। নিহতের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান।

এদিকে ২৬ মে সকালে মঠবাড়িয়ার পৌর শহরের প্রাণী সম্পদ হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে এক ভবঘুরে (৬৫) ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। সকলের ধারণা বৃষ্টিতে ভিজে ঠাণ্ডা লেগে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়াও পিরোজপুর সদরে ১ জন, ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় ৩ জন ও ইন্দুরকানী উপজেলায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে, আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরেসৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি গত রবিবার রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সেই সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। এতে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।

এর মধ্যে রবিবার বিকেলের মধ্যেই বরিশাল সিটির নদীর তীরবর্তী এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এমনকি সোমবার সন্ধ্যার মধ্যেই নগরীর অলিগলিতে ঢুকে পড়ে পানি। নগরীর পলাশপুর, মোহাম্মদপুর, ভাটিখানা, কাউনিয়া, অক্সফোর্ড মিশন রোড, রসুলপুর, কেডিসি, স্টেডিয়াম কলোনী, ধানগবেষণা সড়ক, ব্যাপটিস্ট মিশন রোড, সাগরদী, রূপাতলী এলাকা এবং সদর রোডসহ প্রায় প্রতিটি এলাকায় পানি  ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, চরকাউয়া, চরমোনাই, চন্দ্রমোহনসহ অন্যান্য ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশ গ্রাম এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। 

বরিশালের জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার জানান, ‘রেমালের তাণ্ডবে বরিশাল নগরীসহ জেলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়। এ এলাকার ১০টি দুর্গত উপজেলার ২ হাজার ৪৬৭টি ঘর-বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ২৬৫টি ঘরবাড়ি। এর বাইরে সরাসরি দুর্গত বা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১৮ লাখ ৫ হাজার ৫০০ জন মানুষ। এর বাইরে ফসল, মাছ এবং বনাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। যার পরিমাণ জানার কাজ চলমান রয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫