প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজ

জুনায়েদ আহমেদ, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ১৪:৫৪
বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজ।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজ। আধুনিক ও সময়োপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি করে চলেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের অনেক কৃতী শিক্ষার্থী এখন দেশবরেণ্য ও আলোকিত ব্যক্তিত্ব। প্রতিবছর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনসহ নানা পর্যায়ে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল বাসেত। তিনি প্রায় ত্রিশ বছর এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর বাজার এলাকায় ১৯৭১ সালে স্থাপিত হয় এটি।
দেশ স্বাধীনের পরপরই বশিকপুরের দানবীর, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত হাজী আবুল কালামের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে জমি, ভবন ও শিক্ষক সংকট থাকলেও কালের পরিক্রমায় এলাকার শিক্ষানুরাগী ও উদার মনমানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন বশিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়। ক্রমে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থী সংখ্যা, দূর-দূরান্ত থেকে এসে ভর্তি হতে থাকে ছাত্র-ছাত্রীরা। স্বল্প বেতনেও পাঠদান করাতে পিছপা হননি শিক্ষকরা, পিছিয়ে ছিল না প্রতিষ্ঠানে অল্প বেতনে কর্মরত কর্মচারীরাও। এসএসসি পাশের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে সময়ের তালে তালে নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে সংযোজিত হয় কলেজ শাখা। তাই বশিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিবর্তিত নাম হয় বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজ।
কালের পরিক্রমায় আশপাশে অনেক প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলেও বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজ আজো দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। বশিকপুরের সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। এখানকার সব অভিভাবকের স্বপ্ন থাকে এ প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে ভর্তির বিষয়ে। সন্তানকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজের তরীতে উঠিয়ে দিতে ব্যাকুল থাকেন অভিভাবকরা। ভর্তি হতে পারলেই যেনো নিশ্চিত সন্তানের উন্নত ভবিষ্যৎ। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শতভাগ পাশসহ এখানকার শিক্ষার্থীরা কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা হাজী আবুল কালামের মৃত্যুর পর অনেকটাই অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজ। দীর্ঘ সময় এ প্রতিষ্ঠানে এডহক কমিটি, ম্যানেজিং কমিটির নানা দ্বন্দ্বে কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নিয়ে টানাপড়েন ছিল বেশ। তবুও পাঠদানে কোনধরনের ব্যত্যয় যাতে না ঘটে সেজন্য স্কুল শাখার শিক্ষকদের সাথে নিয়ে আবদুল বাসেত, মাওলানা রুহুল আমিনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এরপর দীর্ঘসময় স্থানীয়দের নানা প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বমহলে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুম, নামাযের স্থান, নতুন ভবন, আধুনিক ক্লাসরুম, সীমানা প্রাচীর, খেলাধুলার জন্য মাঠ সংস্কারসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ৬০০ শিক্ষার্থীর জন্য স্কুল শাখায় ১৪ জন ও কলেজ শাখায় ৯ জন শিক্ষক পাঠদান দিচ্ছেন। ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চারজন এ প্লাসসহ শতকরা ৮৮ দশমিক ৬ পাশ করেন।
প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, কমিটি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় বেশিরভাগ সময়ই। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষকরা চালিয়ে গেলেও পিছিয়ে পড়তে হয় উন্নয়ন কার্যক্রম। তবে বর্তমানে জেলা শিক্ষা অফিসের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানটি দেখভালো করায় খুশি সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল বাসেত জানান, শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও অভিভাবকদের সচেতনতার কারণেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারছে। জবাবদিহিতা ও সচেতনতা বাড়াতে অভিভাবক সমাবেশের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা সফর, ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসবের সিংহভাগই সাবেক শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদানে আয়োজন করা হয় বলে জানালেন এই অধ্যক্ষ।