Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

ভারতের পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা

Icon

সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ২৩:১৫

 ভারতের পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা

সিলেটের বন্যা কবলিত ৫টি উপজেলায় বাড়িঘর, জনপদ ও সড়কে পানি উঠেছে। ছবি- সংগৃহীত

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবলবর্ষণে সিলেটের নদ-নদীগুলোতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জে ৫০ গ্রামসহ শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বারোহাল উপজেলার বারোহালগ্রাম, কাজলশাহ ইউপির আটগ্রামের নলুহাটি গ্রামের সুরমা নদীর বাঁধ, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছবরিয়া, বারোখাল, রারই, খলাছড়া, মাঝর গ্রামসহ কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকে। 

ভারতের বরাক নদী দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসা পানি সুরাম-কুশিয়ারার মোহনায় জকিগঞ্জের অমলসিদে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌছালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার, নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে দিনভর প্লাস্টিকের ব্যাগ ভর্তি বালি-মাটি দিয়ে পানি আটকানো হয়। এ ছাড়া একই পদ্ধতিতে জকিগঞ্জ শহরকে বন্যা মুক্ত রাখার কাজ চলছে। ঢলের তীব্র চাপে কুশিয়রা তীরবর্তী জকিগঞ্জের অধিবাসীরা আতঙ্কে রয়েছেন। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসনিম জানান, উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জৈন্তা-গোয়াইনঘাট এলাকা পরিদর্শন করে সন্ধ্যায় বলেন, ওই এলাকায় ১০০ দুর্গতকে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা নগদ, ১৫ টন জিআর চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে ও নিরাপদে সরিয়ে আনা হচ্ছে। পাঁচটি উপজেলায় জরুরিভিত্তিতে প্রায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খেলা হয়েছে। জরুরি ত্রাণ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। 

তিনি জানান, জৈন্তা, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাটে পানির তোড় বেশি। তবে বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সিলেটের বন্যা কবলিত ৫টি উপজেলা হচ্ছে: জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জেলার পাঁচটি উপজেলার শতাধিক গ্রাম, বাড়ি-ঘর প্লাবিত। জেলায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবেছে। লোকজন গরুবাছুর, ধান-চাল সহায় সম্পদ নিয়ে বিপাকে। অনেক স্থানে লোকজনের খাদ্য, ঘরের আসবাবপত্র ডুবে গেছে। জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়িঘর, জনপদ, সড়ক ও স্কুলগুলোতে পানি উঠেছে। অনেক স্থানে সড়ক ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অনেকেই বাড়িঘর ফেলে উচুস্থান বা সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। জৈন্তাপুরের বিরাইমরা গ্রামের কাছে সড়কে দাঁড়ানো ট্রাকের উপর আশ্রয় নেয় ৫টি পরিবার। অনেক পরিবার পানিবন্দী। জৈন্তুাপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, পরিবহন শ্রমিক অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। জৈন্তাপুরের অন্তত ৯০ ভাগ লোকের বাড়িঘরে পানি। 

সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সন্ধ্যায় জানান, অমলসিদে কুশিয়ারায় পানির তীব্র চাপ। সেখানে নদী বিপদ সীমার ২ মিটার উপরে। এ ছাড়া জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও গোয়াইন নদ-নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে মোট ৫ হাজার ৬০১ হেক্টর আউশ ধান, আউশ বীজতলা ও সবজিখেত কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধানের জমি রয়েছে ১ হাজার ৬৮২ হেক্টর। এ ছাড়া ৯২৭ হেক্টর আউশ বীজতলা ও ২ হাজার ৯৯২ হেক্টর সবজিখেত রয়েছে। জৈন্তাপুরে ক্ষেতের মাচাং-এর উপর পানিতে কচুরীপানা খেলছে। 

সিলেটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান বলেন, এই দুর্যোগে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হবে পানি নেমে গেলে। 

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢল অব্যাহত থাকায় পানি ক্রমেই বাড়ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫