
পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীতে বৃদ্ধি পাওয়া পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলী জমি ও গাছপালা। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মানববন্ধন সমাবেশ করে ভিটে মাটি রক্ষার দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। আর পাউবো বলছে, বরাদ্দ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত দুইদিনের উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার চরসহ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাক্ষেত সহ নানান ফসলি জমি পানিতে ডুবে যায়। এতে কৃষকদের উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে শনিবার দুপুর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এরআগে গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ওইদিন রাতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডুবে যায় তিস্তায় জেগে উঠা চর। তলিয়ে যায় উঠতি ফসল।
এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েকদিনে জেলার আদিতমারী উপজেলার বাহাদুরপাড়া ও গরিবুল্লাহপাড়া এলাকার ছয়টি বসত ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর। নদীতে বিলীন হচ্ছে ধান, ভুট্টা, পাট, মরিচ ক্ষেত সহ ফসলি জমি।
আদিতমারী এলাকার গোবর্ধন এলাকার কৃষক মতি মিয়া বলেন, চরে এ বছর মরিচ, ভুট্টা ও পিয়াজ আবাদ করেছিলাম। হঠাৎ পানিতে ডুবে গিয়ে আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচায় নদী তীরের ছয়টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন দেখা দেওয়ায় ঘরবাড়ি ভেঙ্গে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তারা। ভাঙনে ফসলী জমিও ভাঙছে। ধান, পাট, ভুট্টাসহ মৌসুমি ফসলের ক্ষেত নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও ওই এলাকায় হুমকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবার ও দুইটি মসজিদ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। গত শুক্রবার দুপুরে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী মানববন্ধন ও সমাবেশ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায়।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে ভাঙন চললেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পাউবো কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ে জিও ব্যাগ ফেলে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন যাবে। আমরা বারবার পাউবোকে অনুরোধ করেছি। তারা আশ্বাস দিয়েও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে হলেও ভাঙন না আটকালে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, আমরা ভাঙনের ভিডিও সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছি। বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় বরাদ্দ আসায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর অব্যাহত রয়েছে।