বগুড়ায় আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা, স্বামী আটক

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১৯:৪৩

নিহত আশামনি ও ছেলে আবদুল্লাহ আল রাফি। ছবি: বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ থেকে মা ও তার এক বছরের ছেলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত মার নাম আশামনি (২০) ও ছেলে আবদুল্লাহ আল রাফি (১)।
আজ রবিবার (২ জুন) দুপুরে শাজাহানপুর থানা পুলিশ ওই আবাসিকের কক্ষের ভিতর থেকে আশামনির বিবস্ত্র অবস্থায় এবং ছেলে রাফির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে। নিহত আশামনি বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টি এলাকার আসাদুল ইসলামের মেয়ে। হত্যার অভিযোগে আশামনির স্বামী আজিজুল হককে (২৩) আটক করেছে পুলিশ।
বগুড়ার শাজাহানপুর থানা পুলিশ জানায়, ১ জুন শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়ার হামিদুর রহমানের ছেলে (ছুটিতে থাকা সেনা সদস্য) আজিজুল হক শাজাহানপুর উপজেলার বনানী মোড়ের শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে উঠেন। সেখানে তিনি একটি কক্ষ ভাড়া নেন। কক্ষ ভাড়া নেওয়ার সময় আজিজুল নিজেকে পীরগঞ্জের বাসিন্দা এবং সে নিজেকে মিরাজ বলে পরিচয় দেন। তার স্ত্রীর নাম দেয় তমা (আশামনি)। পরে রবিবার সকাল ১১ টায় হোটেলে ভাড়া দিতে এসে অসংলগ্ন কথাবার্তায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ হোটেলের রুমে গিয়ে লাশ দেখতে পায়।
বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি আবাসিকে উঠে প্রথম স্ত্রী সন্তানকে হত্যার পর কৌশলে ভিন্ন নাটক সাজাতে হোটেল ত্যাগ করেন। পরে আবাসিক কক্ষে এসে নাটক সাজানোর চেষ্টা করলে হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে আজিজুল হককে আটক করা হয় এবং ওই কক্ষ থেকে লাশ পাওয়া যায়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। তার ১ বছর বয়সী ছেলে আব্দুল্লাহ্ আল রাফির মাথাবিহীন লাশ বস্তায় ভরা হয়েছিল। আর শিশুটির মস্তক পাশের করতোয়া নদীতে ফেলে দেয়। সেই মস্তক খোঁজা হচ্ছে। রবিবার দুপুরে লাশ দুটি উদ্ধারের পর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে আইনগত সকল ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
নিহত আশামনির ভাই বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার বাসিন্দা মেহেদি হাসান সনি জানান, সেনা সদস্য আজিজুল হকের সঙ্গে প্রায় তিন বছর আগে তার বোনের বিয়ে হয়। দুই মাসের ছুটি নিয়ে তিনি কিছুদিন আগে বগুড়ায় আসেন। এরপর তার ভগ্নীপতি আজিজুল গত বৃহস্পতিবার শহরের নারুলি এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। শনিবার বেড়ানোর কথা বলে আজিজুল হক তার বোন ও তাদের সন্তানকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। এরপর লাশ পাওয়া গেল। তার বোনের সঙ্গে ভগ্নীপতি আজিজুল হকের দাম্পত্য কলহ ছিল। তার ধারণা দাম্পত্য কলহের কারণেই তার বোন ও ভাগ্নেকে খুন করা হয়েছে।
নিহত আশামনির বাবা আসাদুল ইসলাম জানান, রাত থেকে মেয়ের ফোন বন্ধ, কোন সন্ধান না পেয়ে বগুড়া সদর থানায় সকাল ১১টার পর জিডি করতে যান। করতে গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে তিনি মেয়ের লাশের সন্ধান পান।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বনানী মোড়ের শুভেচ্ছা আবাসিকের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর আজিজুল হক তার স্ত্রী ও এক বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে দোতলার একটি কক্ষে ওঠেন। এরপর রাত ১১টার দিকে তিনি হোটেল থেকে বের হয়ে যান। রবিবার সকাল ১১টার দিকে আজিজুল হক হোটেলে কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করতে আসেন। কিন্তু তখন তার সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান না থাকায় সন্দেহ হয় এবং কথাও বলতে থাকেন অসংলগ্ন। তাকে আটক করে পুলিশকে খবর দেই। পরে পুলিশ এসে ওই কক্ষের ভেতরে আজিজুল হকের স্ত্রী সন্তানের লাশ দেখতে পান।
বগুড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সরাফত ইসলাম জানান, আবাসিকের কক্ষ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি রামদা এবং একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। আজিজুল তার স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দী করে কক্ষের বাথরুমে রাখে। আর সন্তানের গলা কেটে মাথা আলাদা করে বস্তায় ভরে। সকালে সন্তানের বিচ্ছিন্ন মাথাটি পাশের করতোয়া নদীতে ফেলে দেন। সেটি উদ্ধারে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।