Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

চুয়াডাঙ্গায় কবিরাজ হত্যা রহস্য উন্মোচন

Icon

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪, ১৩:৩৫

চুয়াডাঙ্গায় কবিরাজ হত্যা রহস্য উন্মোচন

সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার আর.এম. ফয়জুর রহমান।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকর চন্দ্র ইউনিয়নের কালীভান্ডারদহ পিরতলী মাঠ থেকে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই আলী (৪৮) নামের এক কবিরাজের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের দিনই পুলিশী তদন্তে হত্যা রহস্য উন্মোচতি হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত রুবেল মিয়া ও সোহেল রানাকে আটক করেছে পুলিশ। ওই আটক দুইজন আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের কাছে তাদের দোষ স্বীকার করে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত।

গতকাল মঙ্গলবার (৪ জুন) বেলা ১টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার আর.এম. ফয়জুর রহমান পিপিএম সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ বিজ্ঞ বিচারক রিপন হোসেনের কাছে স্বেচ্ছায় জবানবন্দীতে হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে আটক চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সুবদিয়া পূর্বপাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে রুবেল মিয়া (২৩) ও একই পাড়ার আনিসের ছেলে সোহেল রানা (২০)। এদের কাছ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত আলামত ধারালো ছুরি, ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

নিহত আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই আলী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের সুবদিয়া গ্রামে কাচারীপাড়ার মরহুম দেশের আলীর ছেলে। তিনি কবিরাজী পেশায় যুক্ত ছিলেন এবং চাষাবাদ করতেন। নিহতের আপন ভাইয়ের ছেলে সানোয়ার হোসেন এ হত্যাকাণ্ডের পর চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ৩০২/৩৪ ধারায় একটি মামলা করে।

পুলিশ সুপার আর.এম.ফয়জুর রহমান আরো জানান, প্রত্যেক দিনের মত কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই আলী সন্ধ্যার পর দোকান থেকে চা পান করে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু গত শুক্রবার (৩১ মে) তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাতে আর ফিরে আসেনি। তাকে কে বা কারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে যুগিরহুদা হতে কালীভান্ডারদহ রাস্তায় পিরতলী মাঠে পাশে ফেলে রেখে যায়। সদর থানায় হত্যা মামলা রুজুর পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চুয়াডাঙ্গা সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামানের দিকনির্দেশনায় সদর থানা পুলিশ, চুয়াডাঙ্গা ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন দল গোপন ও প্রকাশ্য তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রুবেল মিয়া ও সোহেল রানার সংপৃক্ততা পেলে তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে। তারপর তারা আদালতে বিজ্ঞ বিচারকের কাছে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়।

পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই কবিরাজ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দিয়ে আসছিল। রুবেল মিয়া ও তার স্ত্রী শারীরিক চিকিৎসার জন্য রাজাই কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। গত শুক্রবার (৩১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজাই কবিরাজ জীনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে রুবেল ও তার স্ত্রীকে সদর উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের নবগঙ্গা নদীর ব্রিজের নিকট পান বরজের কাছে নিয়ে যায়। এরপর রুবেলকে সিগারেট আনতে দোকানে পাঠায়। কিছুক্ষণ পর রুবেল ফিরে এসে তাদের না পেয়ে তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সেটা বন্ধ পায়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ৩৫-৪০ মিনিট পর রাজাই কবিরাজ ও তার স্ত্রী পানবরজের কাছে ফিরে আসলে, রুবেল তার স্ত্রীকে দেখে কোন খারাপ কাজ করেছে বলে সন্দেহ করে। পরবর্তীতে রুবেল বাড়ি ফিরে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, সে কান্নাকাটি করে বলে যে, রাজাই কবিরাজ তার সম্ভ্রমহানী করেছে। এটা জানার পর রুবেল তার সহযোগী সোহেল রানাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাজাই কবিরাজকে তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর জীন তাড়ানোর কথা বলে, কৌশলে সুবদিয়া সিপি বাংলাদেশ লিমিটেড ভুট্টা ক্রয় কেন্দ্রের সামনে থেকে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে কালীভান্ডারদহরে দিকে নিয়ে যায়। এসময় মোটরসাইলের পেছনে বসা রুবেল তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে রাজাই কবিরাজের গলায় পোঁচ দিয়ে তাকে মোটরসাইকেল থেকে নির্জন রাস্তায় ফেলে দেয় এবং তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। মরদেহটি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গাছপালা দিয়ে ঢেকে দিয়ে তারা বাড়ি ফিরে যায়। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সকল আইনি বিধিবিধান মেনে তদন্ত কাজ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপ্স) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সেকেন্দার আলী।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫