
বাধার মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত।
নাটোরের নলডাঙ্গায় দখলদারীদের বাধার মুখে বারনই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পরে আসন্ন কোরবানির ঈদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নলডাঙ্গা পৌর মেয়রের মধ্যস্থতায় দখলদারদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাদের মালপত্র, স্থাপনা সরিয়ে নিতে আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকাল ১০টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ, পল্লী বিদ্যুৎ ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নলডাঙ্গা বাজার এলাকার দখলকৃত জমি উদ্ধারে যান। এসময় দখলকারীরা বাধা দেন।
একপর্যায়ে তারা উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবিতে রাস্তায় বসে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও দখলকারীদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বাগবিতণ্ডা হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
পরে দুপুর দেড়টার দিকে নলডাঙ্গা পৌর মেয়র মরিরুজ্জামানের মধ্যস্থতায় আসন্ন কোরবানির ঈদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মানবিক বিষয় বিবেচনা করে আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা থেকে নিজ নিজ দায়িত্বে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৬ জন দখলকারীর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জেলহক আলম, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো. মহসিন আলী, মাহামুদুল হাসান মুক্তা, আবু বক্কর, মো. ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মরিরুজ্জামান।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সম্প্রতি নলডাঙ্গা গ্রামের সামসুল ইসলাম ও মুর্শেদ নামে দুই ব্যক্তির মধ্যে সীমানা ও জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে এক পক্ষ তার দপ্তরে অভিযোগ করেন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত করা হলে নলডাঙ্গা বাজারস্থ বারনই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ পাউবোর অনেক জমিতে অবৈধ স্থাপনা দেখা যায়। পরে গেল সপ্তাহে দখলকৃত এলাকা চিহ্নিত করে মার্কিং করা হয়। এছাড়া দখলকৃত এলাকা থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে মাইকিং করে ১৬ জনকে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু কেউ কথা না শোনায় নিয়ম অনুযায়ী আজ উচ্ছেদ অভিযানে গেলে বাধা দেন দখলকারীরা। পরে পৌর মেয়রের মধ্যস্থতায় আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এসময়ের মধ্যে তারা স্থাপনা সরিয়ে নিবেন, এমন অঙ্গীকার করে স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তারা স্থাপনা সরিয়ে দখলমুক্ত না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে ‘দখলকারী’দের মধ্যে আলতাফ হোসেন, জসিম উদ্দিন বাবু, মামুন, আব্দুস সালাম, আলাউদ্দিন, আব্দুল মান্নান জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ নির্মাণের সময় বারনই নদীর তীরবর্তী এলাকায় তাদের বাপ-দাদার ভোগ দখলীয় জমি ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ করে। বাঁধ নির্মাণের পর অবশিষ্ট জমি পড়ে থাকায় ওই জমির মালিকরাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আজ পর্যন্ত ভোগ দখল করে আসছেন। পাশাপাশি সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করে খণ্ড খণ্ড করে ১৮ থেকে ২০টি পরিবার ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ অবস্থায় সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে তাদের পথে বসতে হবে।