
বিষ্ণু মূর্তি। ছবি: লেখক
সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের টিঘর গ্রামের দীঘিতে মাটি খননকালে ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল একটি কাঠের বিষ্ণু মূর্তি পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালতের নির্দেশনায় সরাইল থানা কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের ৩১ মে, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মূর্তিটি হস্তান্তর করে।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর টিঘর বিষ্ণু মূর্তি বিষয়ে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটিকে জানায়, মূর্তিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাসায়নিক ল্যাবরেটরিতে উপকরণ শনাক্তকরণের জন্য রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মূর্তিটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং অধিদপ্তরের প্রত্ন স্টোরে রাখা আছে।
বিষ্ণু মূর্তিটির দৈর্ঘ্য ৩৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং উরু বরাবর অংশের বেড় ২৯ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৯০০ গ্রাম। মূর্তিটির তিন হাত ভাঙা। নিচের বাম হাতে রয়েছে চক্র। টিঘর গ্রামে পাওয়া কাঠের বিষ্ণু মূর্তিটি কমপক্ষে দেড় হাজার বছর পুরনো শিল্পরীতির নিদর্শন বলে ধারণা করছেন মূর্তিতত্ত্ববিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
সরাইলে এর আগে আরও দুটি পাথরের প্রাচীন বিষ্ণু মূর্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে অষ্টম শতকের নিদর্শন ‘দশাবতারসহ বিষ্ণু মূর্তি’ সরাইল উপজেলা সদরে আনন্দময়ী কালীবাড়িতে এবং দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকের নিদর্শন অন্য বিষ্ণু মূর্তিটি সরাইলের কালীকচ্ছ ইউনিয়নের একটি কালীমন্দিরে সংরক্ষিত আছে। টিঘরের এই বিষ্ণু মূর্তির সঙ্গে ফ্রান্সের গিমে মিউজিয়ামে পাঠাতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া বগুড়ার রজকপুরের বিষ্ণু মূর্তি এবং ভারতের বিহারের ভাগলপুরে পাওয়া সিংহরূপী বিষ্ণু মূর্তির মিল খুঁজে পান মূর্তিতত্ত্ববিদরা। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ফ্রান্সে নেওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দরের টারমাক থেকে রজকপুরে পাওয়া বিষ্ণু মূর্তিটি খোয়া যায়। পরে ২৮ ডিসেম্বর মূর্তিটির কিছু ভাঙা টুকরো উদ্ধার করা হয়েছিল। বগুড়ার রজকপুরে পাওয়া মাটির তৈরি বাসুদেব-বিষ্ণু মূর্তিটির সময়কাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন মূর্তিটি তৃতীয়-চতুর্থ শতকের; কেউ কেউ মনে করেন, এটি ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের। মূর্তিটির দৈর্ঘ্য ৭০ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৩৬ সেন্টিমিটার এবং বেড় ১৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার।
২০০৭ সালের ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ফ্রান্সে নেওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দরের টারমাক থেকে রজকপুর বিষ্ণু মূর্তিটি খোয়া যায়। পরে ২৮ ডিসেম্বর মূর্তিটির কিছু ভাঙা টুকরো উদ্ধার করা হয়েছিল।